জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফোন বন্ধ! এরপর যা ঘটল…

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারে ট্রেকিং করতে গিয়ে পথ হারিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তির জীবন বাঁচানো হয়েছে সম্প্রতি। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে গভীর জঙ্গলে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়া ওই ব্যক্তির ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে খবর যায় উদ্ধারকারী দলের কাছে।

জানা গেছে, ৫ মে, শনিবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটে।

মাসাচুসেটস রাজ্যের বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী রিচার্ড ডি রেইনা নামের এক ব্যক্তি নিউ হ্যাম্পশায়ারের বার্লিন শহর থেকে ট্রেকিং শুরু করেন। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা নাগাদ তিনি মাউন্ট উইকস-সাউথ পিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু গভীর বরফের কারণে কিলকেনি রিজ ট্রেইলে পথ খুঁজে পেতে সমস্যা হয়।

রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ায় এবং ট্রেইলের চিহ্নগুলো ভালোভাবে দেখা না যাওয়ায় তিনি বিপদে পড়েন।

রিচার্ড ডি রেইনা জানান, পথ খুঁজে বের করার জন্য তিনি বারবার তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিলেন। এতে দ্রুত ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়।

প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা হাঁটার পর ফোন বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ৯১১ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চান। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে তার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছিল এবং বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় তিনি আরও অসহায় হয়ে পড়েন। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি জানান, গভীর রাতে জঙ্গলের মধ্যে একা পথ হারানোটা ছিল তার জন্য ভীতিকর এক মুহূর্ত।

৯১১ নম্বরে ফোন যাওয়ার পর নিউ হ্যাম্পশায়ার ফিশ অ্যান্ড গেম কনজারভেশন অফিসারকে বিষয়টি জানানো হয়।

প্রতিকূল আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং শরীরে জলীয় ভাব প্রবেশ করে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার (হাইপোথার্মিয়া) আশঙ্কার কারণে উদ্ধারকারী দল দ্রুত অভিযান শুরু করে। উদ্ধারকারী দলে ছিলেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক, নিউ হ্যাম্পশায়ার ফিশ অ্যান্ড গেম কনজারভেশন অফিসার এবং বার্লিন ফায়ার ডিপার্টমেন্টের সদস্যরা।

উদ্ধারকারীরা রাস্তা থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে, যেখানে ডি রেইনা ৯১১ নম্বরে ফোন করেছিলেন, সেখানে তাকে খুঁজে পান। রাত ৯টার দিকে যখন উদ্ধারকারীরা তার কাছে পৌঁছান, তখন তিনি চরম স্বস্তি অনুভব করেন।

উদ্ধারকারীরা তাকে শুকনো কাপড়, গরম তরল পানীয় এবং আলো দেন। এরপর তারা প্রায় ৩ কিলোমিটার হেঁটে একটি অল-টেরেইন ভেহিকেলে (এ টি ভি) পৌঁছান। সেই গাড়িটি তাদের বাকি পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করে।

ডি রেইনা জানান, তিনি এপ্রিল বা মে মাসে মেইন, ভারমন্ট অথবা নিউ হ্যাম্পশায়ারের পাহাড়ি অঞ্চলে ট্রেকিং করার পরিকল্পনা আর করেন না। কারণ ওই সময়ে এখানকার আবহাওয়া বেশ কঠিন থাকে।

তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার পর তিনি বেশ মানসিক আঘাত পেয়েছেন এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে তার কষ্ট হচ্ছে।

এ বিষয়ে নিউ হ্যাম্পশায়ার ফিশ অ্যান্ড গেম ল’ এনফোর্সমেন্ট চিফ কর্নেল কেভিন জর্ডান জানিয়েছেন, বর্তমানে ওই অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্কের উন্নতি হয়েছে।

এর ফলে সাহায্য চেয়ে আসা ফোন কলের সংখ্যাও বেড়েছে। তবে তিনি ট্রেকারদের সেলফোনের পাশাপাশি ম্যাপ, কম্পাস, হেডল্যাম্প এবং ম্যাচ-এর মতো প্রয়োজনীয় জিনিস সঙ্গে রাখতে উৎসাহিত করেন।

জর্ডান আরও বলেন, অনেক সময় ট্রেকাররা আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দেন না বা সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নেন না, যা তাদের বিপদে ফেলে।

হাইপোথার্মিয়া বা শরীরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত ঠান্ডায় শরীর কাঁপতে শুরু করে।

দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি জীবনহানির কারণ হতে পারে।

তথ্য সূত্র: পিপল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *