প্রেমের এক অন্যরকম গল্প: হিমালয়ের কোলে, মোলাকাত আর বিশ্বজয়ের পথে।
উঁচু পাহাড় আর তুষারের চাদরে মোড়া নেপালের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম, নাম নাংগি। ২০১২ সালের বসন্তের এক সকালে, এই গ্রামের একটি মোমবাতির আলোয় আলোকিত কুটিরে দেখা হলো জেনি ও জেসনের।
কই হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি, এই অপ্রত্যাশিত সাক্ষাত তাদের জীবন বদলে দেবে।
একের দিকে ছিলেন যুক্তরাজ্যের তরুণী জেনি, যিনি শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলেন নেপালে, ইংরেজি পড়াতে। অন্যদিকে, ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার যুবক জেসন, যিনি পরিবারের সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এসেছিলেন।
বিদ্যুৎবিহীন সেই রাতে, মোমবাতির আলোয় দুজনের চোখাচোখি হয়।
জেনি জানান, “আমি তো কাউকে খুঁজছিলাম না, হিমালয়ের চূড়ায় কার সঙ্গে দেখা হবে!” জেসনেরও একই অবস্থা।
তিনি বলেন, “আমি সত্যিই বুঝিনি কী হতে যাচ্ছে!”
নাংগিতে কাটানো কয়েকটা দিন তাদের হৃদয়ে ভালোবাসার জন্ম দেয়।
জেনি ও জেসন গ্রামের শিশুদের সাথে খেলাধুলা করতেন, একসাথে সিনেমা দেখতেন। জেসন স্কুলের বিদ্যুতের কাজ করতেন, আর জেনি ইংরেজি পড়াতেন।
কিন্তু তখনও তারা জানতেন না, এই সম্পর্ক এতদূর গড়াবে।
জেনি যখন ইংল্যান্ডে ফিরে গেলেন, তখন তাদের মধ্যে নিয়মিত ই-মেইল আদান-প্রদান হতে শুরু করলো।
এরপর এলো আধুনিক প্রযুক্তির হাতছানি।
জেনি জেসনকে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে উৎসাহিত করেন, যাতে তারা হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করতে পারে।
ধীরে ধীরে, তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে। স্কাইপেতে ভিডিও কলে তারা একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন।
তাদের সম্পর্কের গভীরতা টের পাওয়া যায় যখন জেনি জানান যে তিনি অন্য কারো সাথে ডেটিংয়ে যাচ্ছেন।
জেসন মজা করে বলেছিলেন, “আমি চাই সেটা যেন ভালো না হয়।” তাদের ভালোবাসার কথা অবশেষে স্বীকার করে জেনি জানান, “কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
দূরত্ব তাদের ভালোবাসার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না।
অবশেষে, ২০১৩ সালে তারা আবার মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
যুক্তরাজ্যের একটি জনপ্রিয় সঙ্গীত উৎসব, গ্লাস্টনবেরিতে যোগ দিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তারা।
জেসন সেখানে যাওয়ার আগে কয়েক মাস জেনির সঙ্গে থাকার জন্য যুক্তরাজ্যে যান।
জেসন যখন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নামলেন, জেনি তখন জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলেন।
প্রথম সাক্ষাতের পর প্রায় এক বছর কেটে গেছে।
সেই মুহূর্তটা ছিল তাদের কাছে “অস্বাভাবিক”।
এরপর তারা একসঙ্গে ৯ মাস ছিলেন।
একসঙ্গে বাসা ভাড়া করে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন তারা।
অবশেষে, ২০১৪ সালে জেনিও পাড়ি জমালেন ব্রিসবেনে, জেসনের কাছে।
সেখানে তারা তাদের স্বপ্নের বাড়ি তৈরি করেন।
২০১৮ সালে, ৬ই এপ্রিল, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
মজার বিষয় হলো, যে তারিখে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, সেই একই তারিখে তারা জমি কিনেছিলেন এবং বিয়েও করেন।
তাদের বিয়ের স্থানও ছিল পাহাড়ের কাছাকাছি, যেন নেপালের সেই প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতি সবসময় তাদের সাথে থাকে।
আজ, জেনি এবং জেসন অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে সুখে বসবাস করছেন।
তাদের দুটি সন্তান রয়েছে।
জেনি একটি অনলাইন ব্যবসা চালান, যেখানে তিনি ব্যক্তিগতকৃত গয়না ও হস্তনির্মিত উপহার সামগ্রী বিক্রি করেন।
জেসন অবকাঠামো বিষয়ক একটি পেশায় যুক্ত।
তারা এখনো মাঝে মাঝে তাদের সন্তানদের নিয়ে ইংল্যান্ডে যান।
তাদের এই ভালোবাসার গল্প, যা শুরু হয়েছিল দুর্গম এক পাহাড়ি গ্রামে, আজ বিশ্বজুড়ে ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তাদের মতে, “এটা ছিল অপ্রত্যাশিত, কিন্তু জীবন পরিবর্তনকারী এক অভিজ্ঞতা।”
তথ্য সূত্র: সিএনএন