আইন পেশা ভালো না লাগায়, হিপ-হপ শিক্ষকের পথে: ব্রায়ান কুশনারের নতুন দিগন্ত।
শিক্ষকতাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে হিপ-হপকে কাজে লাগানোর এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ব্রায়ান কুশনার। পেশাগত জীবনে তিনি ‘ডায়ালেক্ট’ নামেই বেশি পরিচিত।
আইন নিয়ে পড়াশোনা করা এই ব্যক্তি কীভাবে শিক্ষকতার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশায় এলেন, সেই গল্পটাই আজ তুলে ধরা হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিন আইল্যান্ডসে বেড়ে ওঠা ব্রায়ান, স্কুলের গন্ডি পেরোনোর পর অভিনয় এবং আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্য নিউ ইয়র্কে পাড়ি জমান। শুরুতে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ থাকলেও, নিরাপদ ভবিষ্যৎ হিসেবে আইনকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
একটি ল ফার্মে তিনি কিছুদিন কাজও করেন। কিন্তু সেখানে তার ভালো লাগেনি। কারণ, তিনি এমন কিছু আইনজীবীকে দেখেছেন যারা একটি মামলায় অভিযুক্তদের খালাস পাইয়ে দেওয়ার পর মদের বোতল খুলে উদযাপন করছিলেন। সেই ঘটনা ব্রায়ানের ভেতরের মানুষকে নাড়া দেয়।
শিক্ষকতা জীবন শুরুর আগে ব্রায়ান কিছুকাল র্যাপ যুদ্ধ এবং কবিতা পাঠের আসরে অংশ নিতেন। এরপর একদিন তৃতীয় শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীর সামনে গান পরিবেশন করার সুযোগ হয় তার।
সেই অভিজ্ঞতা ব্রায়ানের জীবন বদলে দেয়। তিনি বুঝতে পারেন, ছোট ছেলেমেয়েদের গান শোনানোটা ক্লাবের মাতাল শ্রোতাদের চেয়ে অনেক বেশি আনন্দের। তাদের প্রশ্নগুলো ছিল গভীর, আর গানের কথায় তারা খুঁজে পেত নতুন শিক্ষা।
এরপর ব্রায়ান শিক্ষকতা পেশায় আসেন এবং শিশুদের কবিতা ও ছড়া লিখতে সাহায্য করতে শুরু করেন। যদিও আগে শিক্ষকতার প্রতি তার কোনো আগ্রহ ছিল না, তবে তিনি সবসময় শিখতে ভালোবাসতেন।
ব্রায়ান মনে করতেন, স্কুলে আনন্দ এবং আগ্রহের অভাব ছিল। তাই তিনি হিপ-হপকে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন।
হিপ-হপের পাঁচটি উপাদান—ডিজে, এমসি, ব্রেক ডান্সিং, গ্রাফিতি এবং নলেজ—শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের শেখার পদ্ধতির সঙ্গে মেলানো যায়।
ব্রায়ান মনে করেন, যারা ক্লাসে চুপচাপ বসে থাকে, ব্রেক ডান্সিং তাদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। আবার, যারা ছবি আঁকতে ভালোবাসে, তারা ছবি আঁকার মাধ্যমে পড়াশোনায় আরও মনোযোগী হতে পারে।
ব্রায়ান কুশনার বর্তমানে ‘পকেটস চেঞ্জ’ নামক একটি সংস্থার পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। এই সংস্থা হিপ-হপের মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে অর্থের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়।
শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ব্রায়ান সম্প্রতি ‘ড্যাম, ইট ফিলস গুড টু বি আ টিচার’ শিরোনামে একটি গান তৈরি করেছেন। গানটি গেটো বয়েজের ‘ড্যাম, ইট ফিলস গুড টু বি আ গ্যাংস্টা’ গান থেকে অনুপ্রাণিত।
গানের মাধ্যমে তিনি শিক্ষকদের জীবনের ভালো-মন্দ দিকগুলো তুলে ধরতে চেয়েছেন। এই গানের মাধ্যমে শিক্ষকদের উৎসাহিত করাই তার প্রধান লক্ষ্য। গান থেকে পাওয়া অর্থ তিনি সুবিধাবঞ্চিত স্কুলগুলোর উন্নয়নে দান করবেন।
ব্রায়ান কুশনার মনে করেন, শিক্ষকতা কোনো সহজ কাজ নয়। শিক্ষকদের সবসময় নতুন কিছু শিখতে হয় এবং শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। তিনি আরও মনে করেন, শিক্ষকতার জগতে বিভিন্ন ধরনের মানুষ আছেন—কোচ, পরামর্শদাতা, শিক্ষক প্রশাসক এবং শিল্পী—যারা শিক্ষার উন্নয়নে অবদান রাখেন।
তথ্য সূত্র: পিপল