হিরোশিগের শিল্প: রং আর অনুভূতির খেলা!

জাপানি শিল্পী উটাকাওয়া হিরোশিগে-র (Utagawa Hiroshige) রঙিন চিত্রকর্মগুলি আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে। তাঁর তুলিতে ফুটিয়ে তোলা প্রকৃতির রূপ, দৈনন্দিন জীবনের ছবি, এমনকি ক্ষণিকের আনন্দগুলোও যেন সময়ের সীমানা পেরিয়ে দর্শকদের কাছে জীবন্ত হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি, লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে (British Museum) আয়োজিত একটি প্রদর্শনীতে এই শিল্পীর কাজগুলো নতুন করে আলোচনায় এসেছে, যা আমাদের বাংলার দর্শকদের জন্যেও আগ্রহের বিষয় হতে পারে।

হিরোশিগে-র জন্ম ১৭৯৭ সালে, জাপানের (Japan) “ইদো” যুগে (Edo period), যা ছিল দেশের সামরিক শাসনের সময়। তাঁর শিল্পকর্ম মূলত কাঠখোদাই চিত্রের (woodblock prints) ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

এই পদ্ধতিতে কাঠের ব্লকের ওপর ছবি খোদাই করে, তাতে রং দিয়ে কাগজের ওপর ফুটিয়ে তোলা হতো। এই শিল্পকৌশল নকশী কাঁথার (Nakshi Kantha) মতো বাংলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে সূক্ষ্ম কারুকার্যের মাধ্যমে গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়।

হিরোশিগের ছবিতে বর্ষাকালে ছাতা মাথায় মানুষের চলাচল, বরফের চাদরে মোড়া প্রকৃতির দৃশ্য, অথবা নদীর ধারে নৌকাবিহারের মতো সাধারণ দৃশ্যগুলোও অসাধারণ হয়ে উঠেছে।

তাঁর কাজের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করতে শিখিয়েছেন। তাঁর ছবিতে, একটি সাধারণ দুপুরের খাবার অথবা বন্ধুদের সাথে কাটানো একটি মুহূর্তও যেন আনন্দের উৎস।

ফরাসি impressionism-এর ( impressionism) ওপর হিরোশিগের কাজের গভীর প্রভাব ছিল। রেনোয়ারের (Renoir) এবং মোনে-র (Monet) মতো শিল্পীরা তাঁর কাজ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন।

উদাহরণস্বরূপ, হিরোশিগের “তারুই” (Tarui) ছবিতে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ধরা মানুষের দৃশ্য, যা রেনোয়ারের “দ্য আমব্রেলাস” (The Umbrellas) ছবিতেও দেখা যায়। আবার, মোনে-র “স্নো-ভিউয়িং অ্যালং দ্য সুমিদা রিভার” (Snow-viewing Along the Sumida River) ছবিতে বরফের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে হিরোশিগের কাজের প্রভাব সুস্পষ্ট।

হিরোশিগের কাজ শুধু ইউরোপীয় শিল্পকলার ওপরই প্রভাব ফেলেনি, বরং ভিনসেন্ট ভ্যান গগ (Vincent van Gogh)-এর মতো শিল্পীরাও তাঁর কাজের অনুরাগী ছিলেন।

ভ্যান গগ, হিরোশিগের “দ্য প্লুম গার্ডেন অ্যাট কামেইডো” (The Plum Garden at Kameido) -এর ছবি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের ছবি এঁকেছিলেন।

হিরোশিগের ছবিতে উজ্জ্বল রং-এর ব্যবহার দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। নীল সমুদ্র, আগুনের মতো আকাশ, উজ্জ্বল লাল ও কমলা রং-এর ব্যবহার তাঁর ছবিতে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।

তাঁর ছবিতে প্রকৃতির দৃশ্য, মানুষের জীবনযাত্রা, এবং উৎসবের আনন্দ – সবকিছুই যেন এক আনন্দময় “নirvana”-র (নির্বাণ) রূপ নেয়।

ব্রিটিশ মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে হিরোশিগের শিল্পকর্মগুলি নতুন করে দর্শকদের সামনে এসেছে। এই প্রদর্শনীতে তাঁর কাজের মাধ্যমে শিল্পী জীবনের সাধারণ মুহূর্তগুলোর প্রতি যে গভীর মনোযোগ ছিল, সেটি তুলে ধরা হয়েছে।

এটি আমাদের জন্য একটি সুযোগ, জাপানি শিল্পকলার এই গুরুত্বপূর্ণ দিকটি সম্পর্কে জানার এবং এর সৌন্দর্য উপভোগ করার।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *