হকনি: লন্ডনে উন্মোচিত হলো শিল্পীর জীবনের গোপন দিক!

বিখ্যাত শিল্পী ডেভিড হকনির (David Hockney) শুরুর দিকের কিছু কাজ নিয়ে লন্ডনে সম্প্রতি একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

‘ইন দ্য মুড ফর লাভ: হকনি ইন লন্ডন, ১৯৬০-১৯৬৩’ শিরোনামের এই প্রদর্শনীতে তাঁর শিল্পী জীবনের প্রথম দিকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ দর্শকদের জন্য উন্মোচন করা হয়েছে।

১৯৬০ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যেকার সময়ে হকনির কাজের ধারা কেমন ছিল, সেই সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় এই প্রদর্শনী থেকে।

রয়্যাল কলেজ অফ আর্টে (Royal College of Art) ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তিনি যে ধরনের কাজ করতেন, তার সঙ্গে পরবর্তীকালে তাঁর পরিচিত শৈলীর একটি বড় পার্থক্য চোখে পড়ে।

প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ছবিগুলোতে সেই সময়ের অস্থিরতা, আবেগ এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ছাপ স্পষ্ট।

প্রদর্শনীতে হকনির তরুণ বয়সের কিছু চিত্রকর্ম, প্রিন্ট ও ড্রয়িং রয়েছে।

তাঁর এই সময়ের কাজে অ্যাবস্ট্রাক্ট এক্সপ্রেশনিজমের (Abstract Expressionism) প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

কিছু ছবিতে দেখা যায়, তীব্র রেখা এবং রঙের ব্যবহার, যা তাঁর পরবর্তীকালের কাজের শান্ত ও পরিশীলিত রূপ থেকে বেশ ভিন্ন।

এই সময়ের কাজে শিল্পীর ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রকাশও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

তাঁর ক্যানভাসে যৌনতা এবং কামনার একটি স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ, ‘ইরেকশন’ (Erection) ছবিতে একটি বিশাল সাদা লিঙ্গকে একটি বাদামী আকারের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়াও, ‘উই টু বয়েজ ক্লিংগিং টুগেদার’ (We Two Boys Clinging Together) ছবিতে পুরুষদের আলিঙ্গনাবদ্ধ একটি দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

এই কাজগুলো সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন সমকামী পুরুষের আত্ম-অনুসন্ধান এবং নিজের সত্তাকে প্রকাশ করার একটি সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা যেতে পারে।

প্রদর্শনীতে হকনির ওপর অন্যান্য শিল্পীদের প্রভাবও নজরে আসে।

তাঁর কাজে সমকালীন শিল্পী যেমন, টোয়েম্বলি (Twombly), বেকন (Bacon), রাউশেনবার্গ (Rauschenberg), এবং জ্যাস্পার জনস (Jasper Johns)-এর শৈলীর মিশ্রণ দেখা যায়।

যদিও কিছু ক্ষেত্রে এই প্রভাবগুলো স্পষ্ট, তবে হকনি সেগুলোকে নিজস্ব একটি রূপে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

প্রদর্শনীতে হকনির বিবর্তনের একটি চিত্রও ফুটে উঠেছে।

অ্যাবস্ট্রাকশন থেকে সরে এসে তিনি ধীরে ধীরে ফিগারেটিভ আর্টের (Figurative art) দিকে ঝুঁকেছিলেন।

তাঁর ‘এ রেকস প্রোগ্রেস’ (A Rake’s Progress)-এর প্রিন্টগুলি এই পরিবর্তনের প্রমাণ।

এছাড়াও, প্রদর্শনীতে একটি বিশাল চশমা পরিহিত, সম্ভবত নিজেকে চিত্রিত করা একটি দানবের ছবিও রয়েছে, যা তাঁর শৈলীর একটি নতুন দিক উন্মোচন করে।

সব মিলিয়ে, এই প্রদর্শনী ডেভিড হকনির শিল্পী জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করে।

তাঁর তরুণ বয়সের কাজগুলো শুধু একটি শিল্পীর শুরুর দিকের পদক্ষেপ নয়, বরং সেই সময়ের আবেগ, আকাঙ্ক্ষা এবং পরীক্ষানিরীক্ষার এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।

প্রদর্শনীটি বর্তমানে লন্ডনের হজলিত হল্যান্ড-হিববার্ট গ্যালারিতে (Hazlitt Holland-Hibbert) অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং আগামী ১৮ই জুলাই পর্যন্ত এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *