কারাগার আর ভগ্ন অতীতের পথে : ‘হলোওয়ে’ ছবিতে নারী বন্দীদের ঘুরে আসা।
ব্রিটিশ কারাগারের অন্ধকার জগৎ এবং সেখানে নারীদের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত হয়েছে নতুন একটি তথ্যচিত্র, যার নাম ‘হলোওয়ে’। এই ছবিতে সাবেক ছয় নারী বন্দীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এক সময়ের কুখ্যাত হলোওয়ে কারাগারে, যা বর্তমানে পরিত্যক্ত। পরিচালক সোফি কমপটন এবং ডেইজি-মে হাডসন-এর এই চলচ্চিত্র নারীদের কারাজীবনের কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে।
হলোওয়ে কারাগারের পুরনো চ্যাপেলে, যেখানে একসময় বন্দীদের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হতো, সেখানেই ছবিটির শুটিং হয়েছে। সেখানে পরিচালকগণ এক ধরনের পরীক্ষার আয়োজন করেন। তারা প্রাক্তন বন্দীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে তাদের শৈশব এবং জীবনের বিভিন্ন কঠিন অভিজ্ঞতার কথা জানতে চান।
যাদের পরিবারে বিশৃঙ্খলা ছিল, যারা পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, অথবা যাদের পরিবারের কেউ মাদকাসক্ত ছিলেন – তাদের এক পা এগিয়ে যেতে বলা হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, পরিচালকেরা দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন যে, কারাগারে আসা অনেক নারীর জীবনের গল্পগুলো আসলে একই রকম।
ছবিতে অংশগ্রহণকারী নারীদের মধ্যে ছিলেন আলিয়া আলি এবং ম্যান্ডি ওগুনমোকুন। আলিয়া ১৮ বছর বয়সে হলোওয়েতে বন্দী হন। তিনি জানান, কারাগারে আসার আগে পর্যন্ত তিনি সবসময় কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শিখেছিলেন, তাই বাইরের জগৎ তাকে সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি।
কিন্তু যখন তিনি তার পুরনো সেলে ফিরে যান, তখন যেন তার ভেতরের ১৮ বছরের কিশোরী কেঁদে উঠেছিল। আলিয়া এখন একটি অলাভজনক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা, যা বাবা-ছাড়া মেয়ে শিশুদের সাহায্য করে।
অন্যদিকে, ম্যান্ডি ওগুনমোকুন-এর মা মাদকাসক্ত ছিলেন। তিনিও ২০ বছর বয়সে প্রথমবার হলোওয়েতে যান এবং পরবর্তীতে মাদকাসক্তির কারণে বারবার কারাগারে আসা যাওয়া করেন। তিনি বলেন, “আমি খুব হতাশ হই যখন দেখি, কারাগারে আসা মানুষগুলোর গল্পগুলো একই রকম। পরিবর্তন এত ধীরে হয় কেন?”
“হলোওয়ে” চলচ্চিত্রটি শুধু কারাগারের ভেতরের জীবন দেখায় না, বরং সেই নারীদের জীবনের গল্পগুলোও তুলে ধরে, যাদের জীবন বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে গেছে। শৈশবে পারিবারিক সহিংসতা, দারিদ্র্য এবং সমাজের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ার কারণে তারা অপরাধের পথে পা বাড়াতে বাধ্য হয়েছিল।
ব্রিটিশ বিচার বিভাগের সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ মনে করেন, “আমরা অনেক বেশি নারীকে কারাগারে পাঠাচ্ছি।” চলচ্চিত্রটি মুক্তি পাওয়ার পর, আশা করা হচ্ছে, নারী অপরাধীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান