আতঙ্কে লস অ্যাঞ্জেলেস! ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের বাড়িটি হারাতে বসেছে বিশ্ব ঐতিহ্য?

লস অ্যাঞ্জেলেসের এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য, ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট-এর ডিজাইন করা “হলিহক হাউস”-এর ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য সম্মানের স্বীকৃতি হারানোর সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। শহরের বাজেট ঘাটতির কারণে লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি কাউন্সিল সাংস্কৃতিক বিষয়ক বিভাগের কর্মীদের সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব ফেলবে এই ঐতিহাসিক বাড়ির উপর।

হলিহক হাউস, যা পূর্ব হলিউডে অবস্থিত, লস অ্যাঞ্জেলেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপত্য নিদর্শন। শুধু তাই নয়, এটি লস অ্যাঞ্জেলেসের একমাত্র ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান। এই বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীর সংখ্যা কমানো হলে, এর ঐতিহ্য রক্ষার কাজটি কঠিন হয়ে পড়বে।

বর্তমানে এখানে দুইজন পূর্ণ সময়ের কর্মী কাজ করেন। প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই সংখ্যা কমে একজনে দাঁড়াবে। এছাড়াও, বর্তমানে খালি থাকা আরও দুটি পদও তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এর ফলে জনসাধারণের জন্য হলিহক হাউস খোলা রাখা এবং এর সংরক্ষণ বিষয়ক কাজগুলো চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

২০১৯ সালে হলিহক হাউস ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের মর্যাদা লাভ করে। উল্লেখ্য, এটি যুক্তরাষ্ট্রের মাত্র ২৬টি বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের মধ্যে একটি, এবং পশ্চিম উপকূলের একমাত্র মানবসৃষ্ট স্থান। বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকার জন্য, হলিহক হাউসে কমপক্ষে চারজন পূর্ণ সময়ের কর্মী থাকা আবশ্যক। কর্মীদের সংখ্যা কমালে, লস অ্যাঞ্জেলেসের এই অনন্য স্থাপত্যটির সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়বে।

ঐতিহাসিক স্থাপত্য সংরক্ষণে কাজ করা একটি সংগঠন, ‘লস অ্যাঞ্জেলেস কনজার্ভেন্সি’-র পরিচালক অ্যান্ড্রু সালিমিয়ান জানান, “কিংবদন্তি স্থপতি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের প্রথম লস অ্যাঞ্জেলেস প্রকল্পটি ছিল হলিহক হাউস। এটি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার স্থাপত্যকলার এক অসাধারণ নিদর্শন।”

এই বিশাল, সতেরো কক্ষ বিশিষ্ট বাড়িটি আমেরিকান তেল ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী অ্যালিন বার্নসডালের জন্য ডিজাইন করেছিলেন ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট। বার্নসডাল এটিকে একটি বিশাল শিল্প ও থিয়েটার কমপ্লেক্সের অংশ হিসাবে তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রকল্পটি সম্পূর্ণতা পায়নি, এবং বার্নসডাল এই বাড়িতে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি।

১৯২৭ সালে বাড়িটি লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের কাছে দান করা হয় এবং ১৯৭৬ সালে এটি জনসাধারণের জন্য একটি জাদুঘর হিসেবে খোলা হয়। প্রাক-কলম্বিয়ান মধ্য আমেরিকান স্থাপত্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে হলিহক হাউস তৈরি করা হয়েছিল। রাইটের সবচেয়ে পরীক্ষামূলক কাজগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম হিসাবে বিবেচিত হয়, এবং এখানে বার্নসডালের প্রিয় ফুল ‘হলিহক’-এর মোটিফ দেখা যায়।

বর্তমানে, এটি বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত, সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শহরটি হলিহক হাউস সংস্কারের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এটি দুই বছর বন্ধ ছিল।

সেই সময়ে এর বিশাল অগ্নিকুণ্ড, কাঁচের বারান্দার দরজা, গেস্টহাউস এবং রাইটের ডিজাইন করা আসবাবপত্র পুনরুদ্ধার করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে কর্মীদের সংখ্যা কমানোর প্রস্তাব সংরক্ষণবিদ এবং স্থাপত্য প্রেমীদের জন্য এক বিরাট ধাক্কা।

সালিমিয়ান আরও বলেন, “হলিহক হাউসকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাইয়ে দেওয়ার জন্য শহরটি ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করেছে, আর এখন কর্মীদের সংখ্যা কমানোর ফলে এই স্থানের সংরক্ষণ, নিরাপত্তা এবং জনসাধারণের প্রবেশাধিকার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *