অটিজম: হলিউডের ছবিতে লুকানো চরিত্র, আসল সত্য ফাঁস!

শিরোনাম: হলিউডের পর্দায় অটিজম: চরিত্রায়ন নাকি ধোঁয়াশা?

হলিউডের সিনেমা এবং টেলিভিশন জগতে প্রায়ই এমন কিছু চরিত্রের দেখা মেলে, যাদের আচরণে অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে ওঠে, কিন্তু তাদের অটিস্টিক (অটিজম আক্রান্ত) হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না। এই প্রবণতা, ‘অটিজম-কোডেড’ চরিত্র হিসেবে পরিচিত।

প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই দ্বিধা? কেন সরাসরি তাদের অটিস্টিক বলা হয় না? সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

সাধারণভাবে বলতে গেলে, অটিজম সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই, অটিজম সম্পর্কে ভুল ধারণা এবং কুসংস্কার প্রচলিত।

ফলে, সিনেমায় অটিজম আক্রান্ত কোনো চরিত্র দেখা গেলে, তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে যদি চরিত্রটিকে ত্রুটিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা হয়। নির্মাতারা সম্ভবত সেই বিতর্ক এড়াতেই এমন চরিত্র তৈরি করেন যাদের মধ্যে অটিজমের কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান, কিন্তু তাদের অটিস্টিক বলা হয় না।

উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘দ্য বিগ ব্যাং থিওরি’-র শেলিডন কুপার, অথবা ‘দ্য অফিস’-এর ডোয়াইট শ্রুটের কথা ধরা যাক। তাদের চরিত্রে কিছু বিশেষত্ব রয়েছে যা অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে দেখা যায়।

শেলিডন সামাজিক পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে সমস্যা অনুভব করে, তার বিশেষ কিছু আগ্রহ রয়েছে, এবং সে নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলতে পছন্দ করে। অন্যদিকে, ডোয়াইটের মধ্যে নিয়ম-কানুনের প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ এবং নিজের জিনিসপত্রের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা যায়। তবে, এই চরিত্রগুলোকে সরাসরি অটিস্টিক বলা হয়নি।

এই ধরনের চরিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্মাতাদের একটি সুবিধা হলো, তারা অটিজমের জটিলতাগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ‘অ্যামেলি’ (Amélie) নামক চলচ্চিত্রে অ্যামেলি নামের একটি চরিত্র রয়েছে, যে সামাজিক সম্পর্ক তৈরিতে অসুবিধার সম্মুখীন হয় এবং নিজের কল্পনার জগতে বেশি সময় কাটায়। এই চরিত্রটিকেও ‘অটিজম-কোডেড’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি চরিত্রগুলো এত সুস্পষ্টভাবে অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলো প্রদর্শন করে, তবে তাদের অটিস্টিক হিসেবে চিহ্নিত করতে দ্বিধা কেন? অনেক বিশ্লেষকের মতে, এর কারণ হলো, নির্মাতারা চান তাদের চরিত্রগুলো যেন আকর্ষণীয় থাকে এবং তাদের ত্রুটিগুলো যেন দর্শকদের কাছে মজাদার হিসেবে উপস্থাপিত হয়।

যদি কোনো চরিত্রকে অটিস্টিক ঘোষণা করা হয়, তবে সমাজের মানুষ হয়তো তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে, অথবা তাদের আচরণকে ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করবে। ফলে, নির্মাতারা চান না তাদের তৈরি করা চরিত্রগুলো কোনো নির্দিষ্ট পরিচয়ের সঙ্গে আবদ্ধ হোক।

তবে, এই ধরনের ‘কোডেড’ চরিত্রগুলো তৈরি করার একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এর ফলে, অনেক অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি হয়তো নিজেদের সমস্যাগুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারেন না, অথবা তাদের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও বাধার সৃষ্টি হয়।

কারণ, তারা হয়তো মনে করেন, তারা ‘শোল্ডন’-এর মতোই, অথবা ‘অ্যামেলি’-র মতোই একটু ‘অন্যরকম’। বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা এখনো অনেক কম।

আমাদের দেশেও সিনেমায় বা নাটকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের চরিত্র কম দেখা যায়। যদি দেখা যায়ও, তবে তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার পরিবর্তে, অনেক সময় ভুল ধারণা বা নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরা হয়।

হলিউডের এই ‘অটিজম-কোডেড’ চরিত্রগুলো একদিকে যেমন অটিজম সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়, তেমনিভাবে এর ভুল উপস্থাপনা অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।

তাই, সিনেমা বা নাটকে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের আরও বেশি এবং সঠিক চিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন, যা সমাজে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *