হলিউডে কী হচ্ছে? শিল্পী ও নির্মাতাদের মধ্যে হাহাকার!

শিরোনাম: হলিউডের সোনালী দিন কি শেষ? কমতে শুরু করেছে চলচ্চিত্র নির্মাণের হার

হলিউড, যা সিনেমার জগৎ-এর কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, সেখানে এখন যেন এক নীরব সংকট চলছে। সিনেমা নির্মাণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ায়, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পী থেকে শুরু করে সরঞ্জাম সরবরাহকারী পর্যন্ত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশ্বজুড়ে বিনোদনপ্রেমীদের কাছে হলিউড এক স্বপ্নের ঠিকানা। কিন্তু বর্তমানে, এই স্বপ্নের শহরে যেন ভাঙনের সুর বাজছে।

লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলের ফিল্ম বিষয়ক সংস্থা ফিল্মএলএ (FilmLA)-এর তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে এখানে বহিরঙ্গন চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিমাণ ২২ শতাংশের বেশি কমে গেছে। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণ নয়, এই সময়ের মধ্যে তারা চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় সব ধরনের কাজের হারও কমতে দেখেছে।

অভিনেত্রী ইয়ানি কিং মন্ডশেইন (Yaani King Mondschein) এর কথাই ধরা যাক। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এনবিসি-র ‘কোয়ান্টাম লিপ’ (Quantum Leap) -এর সেটে কাজ করার পরে, তিনি বেশ কয়েক বছর কোনো অভিনয়ের সুযোগ পাননি। ‘সেক্স অ্যান্ড দ্য সিটি’ এবং ‘ল অ্যান্ড অর্ডার’-এর মতো জনপ্রিয় টিভি শো-তে অভিনয় করা এই অভিনেত্রীর কাছে, কাজ কমে যাওয়াটা এক বিরাট ধাক্কা।

হলিউডের এই পরিবর্তনের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা নির্মাণ বন্ধ ছিল। এর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই, যুক্তরষ্ট্রের লেখক এবং শিল্পী-সংগঠনগুলোর ধর্মঘট (Writers Guild of America strike এবং SAG-AFTRA strike) প্রায় সাত মাস ধরে সিনেমা নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর অন্যান্য রাজ্যের আকর্ষণীয় কর ছাড় (tax incentives) এর কারণে অনেক প্রযোজনা সংস্থা ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

জর্জিয়া রাজ্য এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সুবিধা দিচ্ছে, যেখানে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর ছাড়ের প্রস্তাব রয়েছে। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স-এর ছবি ‘থান্ডারবোল্টস’-এর শুটিংও হয়েছে জর্জিয়ায়।

অন্যদিকে, কানাডা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়ে প্রযোজকদের আকৃষ্ট করছে। ‘দ্য হ্যান্ডমেইডস টেল’-এর মতো জনপ্রিয় টিভি সিরিজ-এর শুটিংও হয়েছে এখানে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র, ক্যারেন বাস (Karen Bass), স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাণকে উৎসাহিত করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে সহজে শুটিং করার অনুমতি দেওয়া, লোকেশন ফি কমানো এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করার ঘোষণা করেছেন। কিন্তু অনেকে মনে করেন, স্থানীয় সরকারের এই পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) সম্প্রতি বিদেশি চলচ্চিত্রগুলোর ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। যদিও এই ধরনের শুল্ক আরোপ করা হলে তা কীভাবে কার্যকর করা হবে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

হলিউডের এই সংকটকালে, অনেকেই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। তবে, এখনও অনেকেই আশা ছাড়তে নারাজ। গ্যারেট ব্লুটার (Garret Blutter), যিনি ‘হলিউড ডিপো রেন্টালস’ (Hollywood Depot Rentals) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক, তাঁর ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ভাড়া দেয়।

ব্যবসা কমে যাওয়ায় তিনি তাঁর কর্মীদের ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমানে তিনি অন্যান্য রাজ্যে ব্যবসার প্রসার ঘটানোর কথা ভাবছেন, যেখানে সিনেমার শুটিং চলছে।

তবে, অনেকেরই বিশ্বাস, হলিউড তার পুরনো গৌরব ফিরে পাবে। এই বিশ্বাস নিয়েই তাঁরা টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *