জার্মানিতে ইহুদি নিধনযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শী মারগট ফ্রাইডল্যান্ডার, ১০৩ বছর বয়সে প্রয়াত।
বার্লিন, জার্মানি – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীর হাতে চালানো গণহত্যা, যা ইতিহাসে ‘হলোকস্ট’ নামে পরিচিত, সেই বিভীষিকার সাক্ষী মারগট ফ্রাইডল্যান্ডার আর নেই। ১০৩ বছর বয়সে বার্লিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।
ফ্রাইডল্যান্ডার ছিলেন একজন জার্মান ইহুদি, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে নাৎসি নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
মারগট ফ্রাইডল্যান্ডারের জন্ম ১৯২১ সালে, বার্লিনে। তাঁর বাবা ছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া একজন সৈনিক। নাৎসিদের ক্ষমতা গ্রহণের পর ফ্রাইডল্যান্ডারের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে।
১৯৪৩ সালে, পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তিনি আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। সেই সময়কার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেছিলেন, “আমি তখন আমার মায়ের শেষ বার্তাটি পেয়েছিলাম – ‘জীবন গড়ার চেষ্টা করো’।”
এই কথাগুলোই পরবর্তীতে তাঁর আত্মজীবনী ‘ট্রাই টু মেক ইউর লাইফ’ (জীবন গড়ার চেষ্টা করো) বইটির শিরোনাম হয়।
নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি বেশ কয়েক মাস আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর ১৯৪৪ সালে ধরা পড়েন এবং তাঁকে থেরেসিয়েনস্টাড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, মারগট ফ্রাইডল্যান্ডার তাঁর স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে প্রায় ৫ দশক বসবাস করেন।
দীর্ঘদিন পর, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি আবার জার্মানে ফিরে আসেন। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে এই গণহত্যার ভয়াবহতা তুলে ধরেন।
ফ্রাইডল্যান্ডার সবসময় বলতেন, “আমি শুধু ৬০ লক্ষ ইহুদির জন্য কথা বলি না, আমি সকল নিরীহ মানুষের হয়ে কথা বলি, যারা এই নৃশংসতার শিকার হয়েছেন।”
মারগট ফ্রাইডল্যান্ডারের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করে জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টাইনমিয়ার বলেছেন, “মারগট ফ্রাইডল্যান্ডার জার্মানিকে ক্ষমা করতে শিখিয়েছেন। তাঁর এই অবদান জার্মানি কোনোদিন ভুলতে পারবে না।”
মারগট ফ্রাইডল্যান্ডারের জীবন, তাঁর সংগ্রামের কাহিনী, ঘৃণা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই, মানবতার জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর প্রয়াণ বিশ্বজুড়ে সকল মানুষের জন্য একটি গভীর ক্ষতির কারণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস