যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির সংস্কার খরচ বাড়ছে, এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি।
এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে নির্মাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে আসবাবপত্র, বাতি এবং অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রীর দাম বাড়ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের উপর, যারা তাদের বাড়িঘর সংস্কার করতে চাইছেন।
জানা গেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া শুল্ক নীতির কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এর ফলে অনেক ব্যবসায়ী তাদের পণ্যের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। শিকাগোর একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, যিনি প্রায়ই চীন থেকে আসা পণ্যের উপর নির্ভরশীল, তিনি জানিয়েছেন যে, শুল্কের কারণে তার ব্যবসার খরচ বেড়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অনেক সময় ব্যবসায়ীরা কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
গৃহ নির্মাণ বিষয়ক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই শুল্ক নীতির কারণে অনেক ঠিকাদার তাদের কাজের পরিকল্পনা করতে দ্বিধা বোধ করছেন। কারণ, সংস্কার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং সামগ্রীর দাম প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে।
একটি বাড়ির সংস্কার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু আগে থেকে মজুত করে রাখা সম্ভব হয় না। ফলে, দাম বাড়লে তাদের লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
শুল্ক বৃদ্ধির কারণে কিছু পণ্যের বাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ইন্টেরিয়র ডেকোরেটর জানিয়েছেন, তিনি তার ক্লায়েন্টের জন্য বাতি (লাইট ফিক্সচার) অর্ডার করেছিলেন, কিন্তু শুল্কের কারণে সেগুলো এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না।
এমনকি একই কোম্পানির বিকল্প বাতির দামও ১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বাজেট স্বল্পতার কারণে তিনি তার ক্লায়েন্টদের দ্রুত জিনিসপত্র কেনার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে দাম আরও না বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে বিপুল পরিমাণে গৃহস্থালি পণ্য আমদানি করে। গত বছর চীন থেকে প্রায় ৪৩৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৯ শতাংশ ছিল রেফ্রিজারেটর, ডিশওয়াশার এবং ওয়াশিং মেশিনের মতো যন্ত্রপাতি।
এছাড়া, আসবাবপত্র, বাতি ও অন্যান্য গৃহসজ্জার সামগ্রীও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে।
বর্তমানে চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর বেশ উচ্চ হারে শুল্ক ধার্য করা হয়েছে। যদিও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক কমানোর বিষয়ে একটি চুক্তি হয়েছে, যার ফলে আগামী ৯০ দিনের জন্য কিছু পণ্যের উপর শুল্ক কমতে পারে।
তবে, এর ফলে দামের ঊর্ধ্বগতি কমবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমেরিকার বাজারে এই শুল্ক নীতির কারণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। অনেক গ্রাহক তাদের সংস্কারের পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছেন, আবার কেউ কেউ তাদের বাজেট কমিয়ে দিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর কিছু প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন হলে তার প্রভাব অন্যান্য দেশেও পড়ে।
বিশেষ করে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক এবং অন্যান্য পণ্য, যা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়, তাদের ক্ষেত্রে শুল্কের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এছাড়া, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা যারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে কাঁচামাল আমদানি করে, তারাও এই পরিবর্তনের শিকার হতে পারেন।
যদিও এই মুহূর্তে বিষয়টি সরাসরি বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে কিনা, তা বলা কঠিন। তবে, বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রেখে, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের তাদের ব্যবসার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন