মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারে এখন দৃশ্যমান পরিবর্তন, যেখানে বাড়ির ক্রেতাদের চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। রিয়েল এস্টেট বিষয়ক সংস্থা রেডফিন-এর সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে এই তথ্য উঠে এসেছে।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাজারে ক্রেতাদের তুলনায় প্রায় ৫ লক্ষ বেশি বাড়ির মালিক ছিলেন, যা ২০১৩ সাল থেকে এই ডেটা সংগ্রহ করার পর সর্বোচ্চ ব্যবধান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যদিও জাতীয়ভাবে বাড়ির দাম এখনো বাড়ছে। গত সপ্তাহে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ রিয়েলটরস-এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে বিদ্যমান বাড়ির গড় বিক্রয় মূল্য ছিল ৪ লক্ষ ১৪ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৪ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা)।
এপ্রিল মাসের জন্য এটি ছিল সর্বোচ্চ এবং টানা ২২ মাস ধরে দাম বাড়ছে।
বর্তমানে, নতুন করে যারা বাড়ি কিনতে চাইছেন, তাদের জন্য উচ্চ সুদের হার একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত, ৩০ বছর মেয়াদী স্ট্যান্ডার্ড হোম লোনের গড় সুদের হার বর্তমানে ৭ শতাংশের কাছাকাছি ঘোরাফেরা করছে।
বন্ড বাজারে অস্থিরতা চললে এই হার আরও বাড়তে পারে।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও ক্রেতাদের মধ্যে দ্বিধা তৈরি করছে। শেয়ার বাজার এবং বন্ড মার্কেটের অস্থিরতা, সেই সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা—সব মিলিয়ে ক্রেতারা এখন বেশ সতর্ক।
ব্যাংক অফ আমেরিকার একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্ভাব্য বাড়ির ক্রেতাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই এখন দাম এবং সুদের হার কমার জন্য অপেক্ষা করছেন।
রেডফিন জানাচ্ছে, ২০২০ সালের মার্চের পর এত বেশি সংখ্যক বাড়ি বিক্রির জন্য বাজারে আসেনি। এমনকি ২০১৩ সাল থেকে তথ্য রাখা শুরু করার পর ২০২০ সালের এপ্রিল মাস বাদে এত কম ক্রেতাও দেখা যায়নি।
কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতে আবাসন বাজার প্রায় থমকে গিয়েছিল।
লাস ভেগাসের রিয়েল এস্টেট এজেন্ট কারেন পোহল জানিয়েছেন, তিনি গত কয়েক মাসে বাজার বিক্রেতাদের দিকে ঝুঁকতে দেখেছেন। তার মতে, অনেক বাড়ির মালিক এখনো তাদের সম্পত্তির জন্য উচ্চ মূল্য চাইছেন, তবে বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে তাদের দামের বিষয়ে বাস্তববাদী হতে হবে।
তিনি আরও জানান, বিক্রেতারা এখন বাড়ির দামে ছাড় দিতে অথবা অন্যান্য সুবিধা দিতে শুরু করেছেন।
আবাসন বাজারে এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বেশ কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করেছেন। একদিকে যেমন বাড়ির উচ্চ মূল্য, তেমনই অন্যদিকে সুদের হারে ঊর্ধ্বগতি ক্রেতাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়াও, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মূল্যস্ফীতি এবং শেয়ার বাজারের অস্থিরতা মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি করেছে।
রেডফিনের প্রধান অর্থনীতিবিদ চেন ঝাও-এর মতে, সাধারণত বিক্রেতা ও ক্রেতার অনুপাত বাড়ির দামের বৃদ্ধি-হ্রাসের পূর্বাভাস দেয়, তবে এতে প্রায় তিন থেকে ছয় মাসের একটি ব্যবধান থাকে।
তার ধারণা, এই বছর শেষে বাড়ির দামে ১ শতাংশ পর্যন্ত পতন হতে পারে। তবে তিনি আরও যোগ করেন, বাড়ির মালিকরা যদি দাম কমাতে রাজি না হন, তাহলে দাম কমা কঠিন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন