হংকং-এর আলো ঝলমলে নিয়ন বাতির ইতিহাস ধীরে ধীরে অস্তমিত হতে চলেছে, তবে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে এক শিল্পী নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
জাইভ লাউ নামের এই শিল্পী হংকং-এর ঐতিহ্যবাহী নিয়ন শিল্পের পুনরুজ্জীবনে কাজ করছেন, যা একসময় শহরটির রাতের আকাশে উজ্জ্বল আলো ছড়াতো।
১৯২০-এর দশকে হংকং-এ নিয়ন বাতির আগমন ঘটেছিল।
এরপর পঞ্চাশ ও আশির দশকে শহরটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সাথে সাথে এই বাতির ব্যবহারও বাড়ে।
দোকান, বার থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট—সবখানেই ছিল নিয়ন বাতির ঝলকানি।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, বিশেষ করে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি বাড়ে এবং অনেক বাতি অপসারণ করা হয়।
এলইডি (LED) বাতির জনপ্রিয়তাও নিয়ন বাতির জায়গা দখল করেছে, কারণ এগুলো স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে তুলনামূলকভাবে সস্তা।
জাইভ লাউ, যিনি পেশায় একজন শিল্পী, এই পরিবর্তনের সাক্ষী।
তিনি উপলব্ধি করেন যে নিয়ন বাতির শিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে।
তাই, ২০২১ সালে তিনি ‘কাওলিনিয়ন’ (Kowloneon) স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে নিয়ন বাতি তৈরির ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০১৬ সালে তাইওয়ানে নিয়ন তৈরির একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেওয়ার পর তিনি এই শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হন।
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় চাকরি হারানোয় তিনি পুরো সময় এই শিল্পকে উৎসর্গ করেন।
বর্তমানে, তিনি বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রকল্পের জন্য নিয়ন বাতির ডিজাইন করছেন, যার মধ্যে রয়েছে একটি মার্কিন ফ্যাশন ব্র্যান্ড কোচ-এর জন্য পপ-আপ দোকানের সম্মুখভাগ, লুই ভিতোঁ-এর একটি অনুষ্ঠানের জন্য সাইন এবং হংকং ব্যালে-এর জন্য আলোকসজ্জা।
লাউ মনে করেন, নিয়ন বাতি হংকং-এর সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তিনি সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “নিয়ন বাতির কোনো বিকল্প নেই।
এটি জাদুকরী।”
তাঁর স্টুডিওতে গেলে দেখা যায়, দেয়ালে নিয়ন বাতির সরঞ্জাম সাজানো রয়েছে এবং টেবিলে ভাঙা টিউব ছড়িয়ে আছে।
তিনি জানান, একটি ফোয়েনিক্স (Phoenix) ও ড্রাগনের (Dragon) ছবি সংবলিত নিয়ন বাতি তৈরি করতে তাঁর এক মাস সময় লেগেছিল।
এটি সাধারণত চীনা বিবাহের ছবি তোলার সময় ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
হংকং-এর পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ব্রায়ান কোয়োক-এর মতে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে হংকং-এর পাঁচটি জেলায় প্রায় ৪৭০টি নিয়ন বাতি ছিল।
বর্তমানে এর ১০ শতাংশও অবশিষ্ট নেই।
নিয়ন বাতি তৈরি একটি জটিল ও কঠিন কাজ, যা কাঁচের টিউবকে উত্তপ্ত করা, আকার দেওয়া এবং গ্যাসের মিশ্রণ প্রবেশ করানোর মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়।
এই কাজটি করার জন্য দক্ষ কারিগর এখন হাতে গোনা কয়েকজনই রয়েছেন।
জাইভ লাউ শুধু বাণিজ্যিক প্রকল্পের জন্য কাজ করেন না, বরং তিনি এই শিল্পের প্রসারের জন্য কাজ করছেন।
তিনি চান, আরও বেশি মানুষ এই শিল্পে আগ্রহী হোক।
সেই লক্ষ্যে, তিনি একটি ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম শুরু করেছেন, যেখানে তরুণদের নিয়ন বাতি তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
তাঁর প্রথম ব্যাচে শিক্ষার্থী এবং প্রযুক্তি ও শিল্পকলার বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন।
বর্তমানে, হংকং-এর কয়েকজন শিল্পী নিয়ন বাতি নিয়ে কাজ করছেন, তবে তাঁদের কাজের ধরন বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন থেকে শিল্পকর্মে পরিণত হয়েছে।
লাউ মনে করেন, হংকং-এর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এই নিয়ন বাতি।
তাই, তিনি চান এই শিল্পের বিকাশ হোক এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর পরিচিতি বজায় থাকুক।
তথ্য সূত্র: সিএনএন