হংকং-এর গণতন্ত্রপন্থী বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, ডেমোক্রেটিক পার্টি, সম্ভবত শীঘ্রই বিলুপ্ত হতে চলেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে দলটির এই সিদ্ধান্ত, যা হংকং-এর নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং স্বায়ত্তশাসনের উপর চরম আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
১৯৯৭ সালে ব্রিটেন থেকে চীনের হাতে হংকং-এর ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় “এক দেশ, দুই ব্যবস্থা”-র অধীনে ৫০ বছর পর্যন্ত হংকং-এর স্বাধীনতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ইয়াং সাম এক সাক্ষাৎকারে জানান, চীনা কর্মকর্তারা তাদের দল ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন। দলের সদস্যরা যদি এই নির্দেশ অমান্য করে, তবে তাদের বড় ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে।
দলের প্রবীণ সদস্য এবং সাবেক চেয়ারপার্সন এমিলি লাউ মনে করেন, বেইজিংয়ের সঙ্গে আলোচনার সময় তাদের কিছু ভুল ছিল।
২০১৯ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল। এই বিক্ষোভের ফলস্বরূপ, চীন সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেয়।
এর মধ্যে ছিল বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন, যা ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করেছে। নির্বাচনের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে, গণমাধ্যমের উপর এসেছে সেন্সরশিপ।
এই আইনের কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক সদস্যকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। একের পর এক নাগরিক সমাজ সংগঠন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৪ সালে দুটি গণতন্ত্রপন্থী দলের একত্রীকরণের মাধ্যমে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্ম হয়। প্রতিষ্ঠার পর দলটি হংকংয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত ছিল।
একসময় তারা আইন পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও অর্জন করেছিল। একসময় দলটি জনপ্রিয় ভোটের প্রায় ৬০ শতাংশ পেত।
কিন্তু বেইজিং-এর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ২০২১ সালে নির্বাচনী আইন পরিবর্তনের ফলে শুধুমাত্র “দেশপ্রেমিক”-দের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাব কমে আসে, কারণ নতুন আইনের কারণে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি।
ইতোমধ্যে, সিভিক পার্টিসহ আরও অনেক গণতন্ত্রপন্থী দল বিলুপ্ত হয়েছে। এমনকি ১৯৮৯ সালের তিয়ানানমেন স্কয়ারের ঘটনার বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভাগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেইজিং এখন সম্ভবত ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী নয়। কারণ, দলটি নতুন নির্বাচনী কাঠামোর অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
দলের এক মুখপাত্র জানান, দলের কর্মীরা এখন অনেকটা চাপের মধ্যে কাজ করছেন।
ফেব্রুয়ারিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তি প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী রোববার এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
দলের কর্মী এবং নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, দলের বিলুপ্তি হংকংয়ের মানুষের অধিকার এবং গণতন্ত্রের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হবে। বিশেষ করে, যারা একটি স্বাধীন সমাজে বেড়ে উঠেছে, তাদের জন্য এটি একটি দুঃস্বপ্ন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির বিলুপ্তি হংকং-এর “এক দেশ, দুই ব্যবস্থা” নীতির প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা আরও কমিয়ে দেবে।
তবে, দলের নেতারা মনে করেন, হংকংয়ের মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা কখনোই শেষ হবে না।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস