হরমোন থেরাপি: বিষণ্ণতা কমায়, নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য!

লিঙ্গ-নির্ধারণী হরমোন থেরাপি: মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক, গবেষণায় প্রমাণ। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, লিঙ্গ-নির্ধারণী হরমোন থেরাপি (Gender-affirming hormone therapy) গ্রহণকারী ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) ব্যক্তিদের মধ্যে বিষণ্ণতার (Depression) ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম থাকে।

গবেষণাটি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর হরমোন থেরাপির ইতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, বোস্টন ও নিউইয়র্ক সিটির দুটি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের ৩,৫৯২ জন রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন গবেষকরা।

গবেষণায় দেখা গেছে, হরমোন থেরাপি গ্রহণকারী ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের মধ্যে চার বছর পর্যন্ত মাঝারি থেকে গুরুতর মাত্রার বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কম ছিল। গবেষণা দলের প্রধান, মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সারি রেইসনার (Dr. Sari Reisner) জানান, “হরমোন গ্রহণকারী ট্রান্সজেন্ডার, নন-বাইনারি (Non-binary) ও জেন্ডার-বৈচিত্র্যপূর্ণ (Gender diverse) রোগীদের মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি কমেছে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ ও কার্যকর হরমোন থেরাপি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এলজিবিটিকিউআইএ+ (LGBTQIA+) সম্প্রদায়ের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বিষয়ক একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, FOLX Health-এর মেডিকেল ডিরেক্টর ড. মিশেল ফোরসিয়ার (Dr. Michelle Forcier) এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “মেডিকেলভাবে নিরাপদ ও কার্যকর হরমোন থেরাপি গ্রহণ করলে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা সময়ের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ভালো ফল পান।”

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮.৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনো সময় গুরুতর বিষণ্ণতার শিকার হন। সেখানে, একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩৩ শতাংশের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণ দেখা যায়।

এই পরিসংখ্যান ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার গভীরতা তুলে ধরে। ড. মেলিনা ওয়াল্ড (Dr. Melina Wald), যিনি একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের জেন্ডার অ্যান্ড সেক্সুয়ালিটি প্রোগ্রামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, বলেছেন, “ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হরমোন থেরাপির পাশাপাশি উপযুক্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।”

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বিধিনিষেধ আরোপের প্রবণতা বেড়েছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ড. রেইসনার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৮ সালে এ সংক্রান্ত যেখানে মাত্র দুটি বিল আনা হয়েছিল, সেখানে ২০২৩ সালে বিলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৫।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, হরমোন থেরাপি কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে না, বরং মানসিক স্বাস্থ্যকেও উন্নত করে। ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের জন্য চিকিৎসা ও সহায়তার সুযোগ বৃদ্ধি করা এখন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। তথ্য সূত্র: সিএনএন (CNN)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *