ইরান-মার্কিন উত্তেজনায় হরমুজ প্রণালীর গুরুত্ব, তেলের দামে কী প্রভাব?

ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিশ্বজুড়ে তেলের বাজারে অস্থিরতা, বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার কারণ।

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। বিশেষ করে, হরমুজ প্রণালীর (Strait of Hormuz) উপর ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের মধ্যেকার বিরোধের কারণে বিশ্ববাজারে তেলের দাম দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

হরমুজ প্রণালী, যা পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের মাঝে অবস্থিত, বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। সংকীর্ণ এই প্রণালীটি ২১ মাইল প্রশস্ত এবং এটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ হয়। এই জলপথটি বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের প্রায় এক পঞ্চমাংশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইরানের নিয়ন্ত্রাধীন এই জলপথ বন্ধ হয়ে গেলে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যেতে পারে।

সম্প্রতি, ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার পর তেলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকদের মতে, হরমুজ প্রণালীতে কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটলে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে।

হরমুজ প্রণালী দিয়ে এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি তেল ও গ্যাস সরবরাহ করা হয়। গত বছর এই জলপথ দিয়ে যাওয়া অপরিশোধিত তেলের ৮৪ শতাংশ এবং এলএনজির ৮৩ শতাংশই এশিয়ার বাজারে পৌঁছেছে। চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলো এই রুটের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে চীন প্রতিদিন ৫৪ লক্ষ ব্যারেল, ভারত ২১ লক্ষ ব্যারেল এবং দক্ষিণ কোরিয়া ১৭ লক্ষ ব্যারেল তেল আমদানি করেছে।

বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি উদ্বেগের কারণ। কারণ, জ্বালানির জন্য বাংলাদেশকে আমদানি নির্ভর করতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে, দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে, যা অর্থনীতির উপর চাপ সৃষ্টি করবে।

তবে, ভারতের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে যে তারা তাদের তেল সরবরাহ ব্যবস্থা ‘বৈচিত্র্যময়’ করেছে। দেশটির পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী জানিয়েছেন, তাদের সরবরাহ এখন হরমুজ প্রণালীর উপর ততটা নির্ভরশীল নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের উচিত হবে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতা বিবেচনা করে দেশের বাজারে জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *