ব্রিটিশ তরুণীর কঠিন লড়াই: পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থা থেকে উঠে এসে টিকটক-এ সাফল্যের কাহিনী
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, জীবনের কঠিনতম এক পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন বিশ বছর বয়সী মেগান ডিক্সন। অল্প বয়সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, বিরল এক স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হয়ে দুই বছর ধরে সম্পূর্ণভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যান তিনি। কথা বলা, দেখা বা কোনো কিছুই করতে পারতেন না তিনি। তবে অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও চিকিৎসার মাধ্যমে ধীরে ধীরে তিনি সেই অবস্থা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন, যা অনেকের কাছেই এক দৃষ্টান্তস্বরূপ।
মেগান যখন ১৩ বছর বয়সী, তখন থেকেই তার শারীরিক অসুস্থতা শুরু হয়। ১৬ বছর বয়সে কথা বলার ক্ষমতা হারানোয় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেগান জানান, চিকিৎসকরা প্রথমে তার স্ট্রোক হয়েছে বলে ধারণা করেছিলেন। পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, দুই বছর সেখানে কাটাতে হয়েছিল তাকে।
এরপর যখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান, ততদিনে তিনি সম্পূর্ণরূপে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
চিকিৎসকরা জানান, মেগান ‘ফাংশনাল নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার’ (FND) নামক একটি বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এই রোগে স্নায়ুতন্ত্রের এমন কিছু সমস্যা দেখা যায়, যা অন্য কোনো নিউরোলজিক্যাল রোগ বা শারীরিক অবস্থার কারণে ব্যাখ্যা করা যায় না।
FND এর সঠিক কারণ এখনো অজানা। এই রোগের কারণে মেগান এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি চোখ মেলতে পারতেন না, কথা বলতে পারতেন না, এমনকি খাবার পর্যন্ত গেলতে পারতেন না। মারাত্মক পরিস্থিতিতে দিনে ৫০ বারের বেশি খিঁচুনি হতো তার।
হাসপাতাল থেকে ফেরার পর, মেগানকে ইংল্যান্ডের একটি নিউরোলজিক্যাল কেয়ার সেন্টারে রাখা হয়। সেখানে ১৮ মাস ধরে ফিজিওথেরাপি নেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হতে শুরু করে।
ধীরে ধীরে তিনি তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ নাড়াচাড়া করতে সক্ষম হন। দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার পাশাপাশি, তিনি আবার কথা বলতে শুরু করেন।
বর্তমানে তিনি হাঁটতে না পারলেও, নিজের হাঁটার স্বপ্ন পূরণ করতে অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষা করছেন।
মেগান তার জীবনের এই কঠিন অভিজ্ঞতা টিকটকে @megsdixon আইডি থেকে শেয়ার করেন। সেখানে তিনি তার শারীরিক অবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন, যা অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এমনকি সম্প্রতি তিনি একটি সুইমিং পুলে কারো সাহায্য ছাড়াই হেঁটে দেখিয়েছেন।
বর্তমানে মেগান তার নিজের বাড়িতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এবং একজন নেল টেকনিশিয়ান হওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “ছোট্ট একটি জয়, যেমন একটি আঙুল নাড়ানো, একটি শব্দ বলা, অথবা একটি দিন ভালোভাবে কাটানো – এগুলো উদযাপন করার মতো।
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন আমি ১৮ বছর পর্যন্তও বাঁচবো না, অথচ আমি এখন ২০ বছরে পা দিয়েছি।
তথ্য সূত্র: পিপলস