বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়ঙ্কর চিত্র: বিজ্ঞানীরা শিউরে উঠছেন!

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে গত এক দশকে পৃথিবীর আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন হয়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (World Meteorological Organization – WMO) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর নজর রাখা এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সাল ছিল উষ্ণতম বছর, এবং ২০২৪ সেই রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, কার্বন ডাই অক্সাইড (Carbon Dioxide), মিথেন (Methane) ও নাইট্রাস অক্সাইডের (Nitrous Oxide) মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ গত ৮ লক্ষ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে গড় তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের (১৮৫০-১৯০০) তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা, যদিও এখনই চূড়ান্ত সীমা পার হয়ে গেছি, এমনটা বলার সময় আসেনি।

সমুদ্রের জল ক্রমাগত গরম হওয়ায় গত আট বছর ধরে সমুদ্রের তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। গত দু’দশকে সমুদ্রের জল গরম হওয়ার হার ১৯৫০ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে রেকর্ড হওয়া হারের দ্বিগুণেরও বেশি।

এর ফলে সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে, যার ফলস্বরূপ প্রবাল প্রাচীরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে সমুদ্রের বরফও গলছে দ্রুত।

স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হারও বাড়ছে। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০২ সালের মধ্যে যেখানে প্রতি বছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২.১ মিলিমিটার করে বাড়ছিল, সেখানে ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.৭ মিলিমিটারে।

এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলে, বিশেষ করে বন্যা, ভূমি ক্ষয় এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির মতো সমস্যাগুলো বাড়ছে। হিমবাহের বরফ গলতে থাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে তা আরও বেশি সহায়তা করছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন, যা ২০০৮ সালের পর সর্বোচ্চ।

২০০৮ সালে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের এই ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (António Guterres) এই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এখনো সম্ভব, তবে এর জন্য বিশ্বনেতাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সারা পারকিন্স-কর্কপ্যাট্রিক (Sarah Perkins-Kirkpatrick) বলেছেন, কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করাই যথেষ্ট নয়, বরং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি এখনই ব্যবস্থা না নেই, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।”

অন্যদিকে, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক লিন্ডেন অ্যাশক্রফট (Linden Ashcroft) এই বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, সরকার এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দেখা যাচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *