এআই নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের ষড়যন্ত্র! ১০০-র বেশি সংস্থার প্রতিবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা একটি নতুন বিলের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence – AI) বিষয়ক রাজ্যগুলির ক্ষমতা সীমিত করার চেষ্টা করছেন। এই পদক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ১০০টিরও বেশি সংস্থা এর বিরোধিতা করছে।

খবর অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত একটি বিলের অংশ হিসেবে, যদি এই আইন পাস হয়, তাহলে আগামী ১০ বছর ধরে রাজ্য সরকারগুলি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মডেল, সিস্টেম বা স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া (automated decision systems) সংক্রান্ত কোনো আইন তৈরি বা কার্যকর করতে পারবে না।

এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানা যায়, বর্তমান সময়ে এআই প্রযুক্তি দ্রুত বিস্তার লাভ করছে এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মী নিয়োগ থেকে শুরু করে পুলিশের কাজেও এর ব্যবহার বাড়ছে। এমতাবস্থায়, রাজ্যগুলোকে যদি এই প্রযুক্তি বিষয়ক আইন প্রণয়নে বাধা দেওয়া হয়, তাহলে ব্যবহারকারী এবং সমাজের ক্ষতি হতে পারে।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যেমন – কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, জর্জটাউন ল’ সেন্টার অন প্রাইভেসি অ্যান্ড টেকনোলজি এবং বিভিন্ন অধিকার সংস্থা, যেমন – সাউদার্ন পোভার্টি ল’ সেন্টার, এই বিলের বিরুদ্ধে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে কংগ্রেসের সদস্য এবং অন্যান্য নীতিনির্ধারকদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই স্থগিতাদেশের ফলে এমনও হতে পারে যে, কোনো কোম্পানি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন একটি অ্যালগরিদম তৈরি করে যা ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে সেই খারাপ প্রযুক্তির নির্মাতা বা ব্যবহারকারী আইনপ্রণেতা এবং জনসাধারণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে না।”

এই বিলটি ইতোমধ্যে প্রতিনিধি পরিষদের বাজেট কমিটির অনুমোদন লাভ করেছে, তবে এটি এখনো সিনেটে উত্থাপনের আগে আরও কিছু ভোটে জয়ী হতে হবে।

অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর এআই বিষয়ক কিছু ফেডারেল নিয়ম শিথিল করেছেন। এমনকি, তিনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু এআই চিপ রপ্তানির ওপর থেকে বাইডেন প্রশাসনের দেওয়া বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো, এআই প্রযুক্তিতে বিশ্বের নেতৃত্ব ধরে রাখা, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে।

তবে, ফেডারেল সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনার অভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্য সরকারগুলো ইতিমধ্যে এআই-এর ঝুঁকিপূর্ণ কিছু প্রয়োগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে শুরু করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, কলোরাডো রাজ্যে গত বছর একটি আইন পাস হয়, যেখানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে কর্মী নিয়োগ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যালগরিদমের মাধ্যমে বৈষম্য রোধ করতে এবং ব্যবহারকারীদের জানাতে বলা হয়েছে যে তারা এআই সিস্টেমের সাথে যোগাযোগ করছেন।

এছাড়াও, নিউ জার্সি এবং ওহাইও রাজ্যেও এআই-এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে।

এআই-এর কিছু প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা উচিত, এমন বিষয়ে উভয় দলের মধ্যে ঐকমত্য দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি, একটি নতুন আইনে সম্মতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যেখানে সম্মতি ছাড়া তৈরি হওয়া এআই-এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া ছবি (deepfake) শেয়ার করাকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এআই নিয়ে বিতর্ক এখনো চলছে। ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যানের মতে, এআই-এর ঝুঁকি কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। তিনি আরও বলেছেন, কোম্পানিগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় স্পষ্ট আইনি কাঠামো প্রয়োজন।

বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, এআই-এর নৈতিক এবং সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে, এর নিয়ম-কানুন এবং নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *