বহু দেশে, বিশেষ করে যেখানে ভাড়ার খরচ বেশি, সেখানে ফ্ল্যাট-শেয়ারিং বা একই বাড়িতে কয়েকজন মিলে থাকার চল বেশ জনপ্রিয়। আমাদের দেশেও, বিশেষ করে ছাত্র এবং তরুণ পেশাজীবীদের মধ্যে, একসঙ্গে থাকার প্রবণতা দেখা যায়।
সম্প্রতি, “হাউ টু স্টে সান ইন এ হাউস শেয়ার” (How to Stay Sane in a House Share) বইটির লেখিকা, অ্যালিস উইলকিনসন, তাঁর বহু বছরের ফ্ল্যাট-শেয়ারিং-এর অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু তিক্ত-মধুর স্মৃতিচারণ করেছেন।
আসুন, তাঁর সেই অভিজ্ঞতার কয়েকটি দিক থেকে আমরা কিছু শিক্ষণীয় বিষয় জানার চেষ্টা করি।
প্রথম অভিজ্ঞতাটি ছিল, অপ্রত্যাশিতভাবে নিজের প্রিয় মগে মাদক দ্রব্য খুঁজে পাওয়া। অ্যালিসের ভাষায়, “আমি যখন আমার বোনের বাড়িতে চা পরিবেশন করতে গেলাম, তখনই দেখি আমার সবচেয়ে সুন্দর কাপের ভেতর MDMA-এর ক্রিস্টাল!”
এই ঘটনা থেকে তিনি বুঝেছিলেন, ফ্ল্যাট-শেয়ারিং-এ ব্যক্তিগত জিনিসের নিরাপত্তা কতটা জরুরি। এরপর তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র নিজের ঘরে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
আরেকটি ঘটনা ছিল, যখন তিনি জানতে পারেন তাঁর এক রুমমেট কাপড় ধোয়ার সময় ডিটারজেন্ট ব্যবহার করেন না।
অপরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তিনি সুগন্ধী মোমবাতি ব্যবহার করা শুরু করেন। কিন্তু, তাঁর মতে, এই ধরনের সমস্যার সমাধানে সরাসরি কথা বলাটাই সবচেয়ে কার্যকরী।
ফ্ল্যাট-শেয়ারিং-এর আরেকটি সমস্যা হল পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব। একবার, অ্যালিস তাঁর রুমমেটের সঙ্গে বাইরে ঘোরাঘুরি করা নিয়ে ঝগড়া করেন।
তিনি বুঝতে পারেন, একসঙ্গে থাকার সময় একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং কোনো বিষয়ে আপত্তি থাকলে তা দ্রুত জানানো উচিত।
এছাড়াও, ফ্ল্যাট-শেয়ারিং-এ অপ্রত্যাশিত অতিথি প্রায়ই সমস্যা তৈরি করে। অ্যালিসের এক রুমমেটের প্রেমিক প্রায়ই তাঁদের ফ্ল্যাটে থাকতেন, কিন্তু ভাড়া দিতেন না।
এই ঘটনা থেকে তিনি শিখেছিলেন, ফ্ল্যাট-শেয়ারিং-এর ক্ষেত্রে পরিষ্কার নিয়ম থাকা দরকার।
কখনও বা অপ্রত্যাশিত ঘটনার শিকার হতে হয়। একবার, একটি হাউসওয়ার্মিং পার্টিতে তাঁর রুমমেটের এক বন্ধু বমি করে পুরো রান্নাঘর অপরিষ্কার করে ফেলেছিল।
পার্টি শেষে সেই ঘর পরিষ্কার করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে তিনি পরিচিত পরিবেশে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানো পছন্দ করবেন।
কখনও বা সঙ্গীরা বিশ্বাসঘাতকতা করে। অ্যালিসের এক বন্ধু এবং তাঁর প্রেমিকের মধ্যে টাকা-পয়সা এবং মদের হিসাব নিয়ে সমস্যা হয়।
পরে জানা যায়, তাঁর বন্ধুর প্রেমিকই ছিলেন চুরির সঙ্গে জড়িত। এই ঘটনা অ্যালিসকে গভীরভাবে আঘাত করে।
এই সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকে অ্যালিস ফ্ল্যাট-শেয়ারিং-এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, ঘরোয়া পরিবেশে শান্তি বজায় রাখতে হলে পারস্পরিক সম্মান, স্পষ্ট যোগাযোগ এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
যদি আপনিও ফ্ল্যাট-শেয়ারিং করার কথা ভাবছেন, তবে অ্যালিসের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান