বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতা এবং আবাসন বাজারের উপর এর প্রভাব।
বৈশ্বিক অর্থনীতির আকাশে এখন ঘন কালো মেঘ। একদিকে বাণিজ্য যুদ্ধ, অন্যদিকে শেয়ার বাজারের অস্থিরতা, সব মিলিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবাসন বাজারে দেখা যাচ্ছে চরম অনিশ্চয়তা।
সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও এর প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আবাসন বাজারে এখন সুদের হার বৃদ্ধি, শেয়ার বাজারের পতন এবং বাণিজ্য শুল্কের কারণে অস্থিরতা বাড়ছে। অনেক সম্ভাব্য ক্রেতা, বিশেষ করে প্রথমবারের মতো বাড়ি কিনতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা, এই পরিস্থিতিতে তাদের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করছেন।
সম্পত্তি বিষয়ক এজেন্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কায় অনেক ক্রেতা এখন অপেক্ষা করতে চাইছে। কেউ কেউ চাকরি হারানোর ভয়ে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করতে দ্বিধা বোধ করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য শুল্কের কারণে নির্মাণ সামগ্রী এবং গৃহস্থালীর জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। ফলে, যারা পুরাতন বাড়ি কিনে সংস্কার করার পরিকল্পনা করছিলেন, তারাও এখন পিছিয়ে আসছেন।
এছাড়া, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে যারা বাড়ি কেনার জন্য অর্থ জমাতে চাচ্ছিলেন, তাদের সঞ্চয়েও এখন ভাটা পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, অনেক বিশেষজ্ঞ নতুন করে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মার্চ মাসে পুরনো বাড়ির বিক্রি কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। এটি ২০০৯ সালের পর মার্চ মাসের সবচেয়ে দুর্বল চিত্র।
একই সময়ে, বাড়ির ক্রেতাদের চুক্তি বাতিলের সংখ্যাও বেড়েছে, যা ২০২০ সালের পর সর্বোচ্চ।
এই পরিস্থিতি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল অবস্থা বাংলাদেশের আবাসন বাজারকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বিশ্ববাজারে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়লে, দেশের বাজারেও তার প্রভাব পড়বে। এছাড়া, প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের উপরও এর একটা প্রভাব আসতে পারে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আবাসন বাজারে বিনিয়োগের আগে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত। সুদের হার, নির্মাণ সামগ্রীর দাম এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি—এগুলো সবকিছুই এখন নজরে রাখতে হবে।
এছাড়া, শেয়ার বাজারের অস্থিরতা এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিবর্তনগুলোও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এক্ষেত্রে, স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করা যেতে পারে। এছাড়া, বাজারের অস্থিরতা কমাতে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।
মোটকথা, বিশ্ব অর্থনীতির এই অনিশ্চয়তা আবাসন বাজারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে, প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে সবকিছু বিবেচনা করতে হবে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম অবলম্বনে।