মার্কিন বিমান হামলা: হুতিদের মনোবল আরও বাড়ছে? বিস্ফোরক খবর!

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার পরেও যেন দমে যাচ্ছে না ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা, বরং তারা যেন এটিকে উপভোগই করছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে একের পর এক বিমান হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর এবং ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত হানা হলেও, বিদ্রোহীরা এখনো তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।

এমনকি, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের আক্রমণের পরিধি সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

জানা যায়, গত অক্টোবর মাস থেকে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে হুতি বিদ্রোহীরা।

এখন পর্যন্ত তারা একশোর বেশি হামলা চালিয়েছে এবং দুটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে।

এর ফলস্বরূপ, এক সময়ের ব্যস্ততম এই সমুদ্রপথে চলাচল করা জাহাজের প্রায় ৭০ শতাংশ বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ দিক দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, তাদের এই সামরিক অভিযান সফল হচ্ছে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালজ জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন হুতি নেতা নিহত হয়েছেন।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, হুতিদের শীর্ষস্থানীয় সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।

বরং তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তারা ইসরায়েলের দিকে এক ডজনেরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, এছাড়াও মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজগুলোতেও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।

যদিও এসব হামলায় বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়নি, তবুও হুমকি এখনো বিদ্যমান।

বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, হুতিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানের খরচ এরই মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

তবে বিদ্রোহীদের সক্ষমতা ধ্বংস করতে এই অভিযান তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা অস্ত্রশস্ত্র, জ্বালানি এবং সামরিক প্রস্তুতির পেছনে বিপুল অর্থ খরচ করছি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হুতিদের টিকে থাকার মূল কারণ হলো তাদের শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা।

তারা যেন এক ধরনের “অদম্য যোদ্ধা”।

তাদের এই মানসিকতা এবং দীর্ঘদিনের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাদের শক্তিশালী করেছে।

এছাড়াও, ক্ষেপণাস্ত্রের যন্ত্রাংশ এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার জন্য তাদের একটি শক্তিশালী চোরাচালান নেটওয়ার্ক রয়েছে।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযান কতদূর সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

কারণ অতীতেও দেখা গেছে, হুতিরা বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরব এবং পশ্চিমা দেশগুলোর বিমান হামলার পরেও টিকে ছিল।

বর্তমানে, ইয়েমেনের রাজধানী সানাসহ দেশটির উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা হুতিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, হুতিদের দমনের জন্য কেবল বিমান হামলা যথেষ্ট নয়, বরং তাদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালানো প্রয়োজন।

তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সৈন্য পাঠাবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

সম্ভবত, তারা ইয়েমেনি বাহিনীকে সহায়তা করতে পারে।

এক্ষেত্রে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) হয়তো তাদের সমর্থন যোগাবে।

অন্যদিকে, সৌদি আরব হুতিদের প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই সৌদি আরবে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করা শুরু করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, হুতিদের যেকোনো হামলার জন্য তেহরানকে দায়ী করা হবে।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের পক্ষে হুতিদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

কারণ, হুতিরা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে যথেষ্ট স্বাধীন।

বর্তমানে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, আগামী কয়েক সপ্তাহ হুতি বিদ্রোহীদের প্রতিরোধের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হতে চলেছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *