মহাকাশে, আমাদের ‘মহাজাগতিক উঠোনে’ এক বিশাল নক্ষত্র তৈরির মেঘের সন্ধান!
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর খুব কাছেই, এমন একটি বিশাল আণবিক মেঘ খুঁজে পেয়েছেন যা আগে আমাদের নজরে আসেনি। এই মেঘের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইওস’, যা গ্রিক দেবী ‘ভোরের দেবী’-র নামানুসারে রাখা হয়েছে।
যদি এটি খালি চোখে দেখা যেত, তবে রাতের আকাশে এর বিস্তার হতো প্রায় ৪০টি চাঁদের সমান! বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই মেঘের ভর সূর্যের ভরের প্রায় ৩,৪০০ গুণ বেশি।
আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সিতে নক্ষত্র এবং গ্রহ কীভাবে তৈরি হয়, তা বুঝতে এই আবিষ্কারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্পদার্থবিদ টমাস হাওয়ার্থের মতে, “মহাকাশ গবেষণায়, আগে যা দেখা যায়নি, তা দেখতে হলে শক্তিশালী টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু এই মেঘটি যেন আমাদের উঠোনেই ছিল, অথচ আমরা তা এতদিন খুঁজে পাইনি।”
আণবিক মেঘ আসলে গ্যাস এবং ধুলো দিয়ে গঠিত, যেখানে হাইড্রোজেন ও কার্বন মনোক্সাইড অণু তৈরি হতে পারে।
এই মেঘের ঘন অংশে নতুন নক্ষত্রের জন্ম হয়। বিজ্ঞানীরা সাধারণত রেডিও এবং ইনফ্রারেড তরঙ্গ ব্যবহার করে কার্বন মনোক্সাইডের উপস্থিতি চিহ্নিত করেন, যা তাদের এই মেঘ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
তবে, ইওস মেঘের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কাজ করেনি, কারণ এতে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ খুবই কম।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়েননি। তাঁরা হাইড্রোজেন থেকে নির্গত অতিবেগুনি আলো ব্যবহার করে এই মেঘ খুঁজে বের করেছেন।
রুটার্স স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের অধ্যাপক ব্লেকসলি বার্খার্ট জানিয়েছেন, “আমরা অন্য রঙের আলো ব্যবহার করতে পারায় এই মেঘটি খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছি।
এই প্রথম সরাসরি আণবিক হাইড্রোজেনের অতিবেগুনি আলো ব্যবহার করে এমন একটি মেঘ আবিষ্কার করা হলো।”
এই আবিষ্কারের জন্য কোরিয়ান স্যাটেলাইট STSAT-1 এ থাকা FIMS-SPEAR নামক একটি বিশেষ যন্ত্রের ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে।
এই যন্ত্র অতিবেগুনি আলোকে বিশ্লেষণ করে তার উপাদান শনাক্ত করতে পারে। বার্খার্ট আরও বলেন, “ইওস আবিষ্কারের ফলে আমরা সরাসরি দেখতে পারব কীভাবে আণবিক মেঘ তৈরি হয় এবং কীভাবে গ্যালাক্সিতে গ্যাস ও ধুলো থেকে নক্ষত্র ও গ্রহের জন্ম হয়।”
নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মেলিসা ম্যাকক্লুর মনে করেন, “আগে আমরা সূর্যের ১,৬০০ আলোকবর্ষের মধ্যে থাকা আণবিক মেঘগুলো সম্পর্কে জানতাম।
কিন্তু এই নতুন মেঘ, ইওস, মাত্র ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, যা খুবই আশ্চর্যজনক।
আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে এক আলোকবর্ষ বলা হয়। এর থেকে মহাকাশের বিশালতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
ম্যাকক্লুর আরও যোগ করেন, “এটা অনেকটা এমন যে আপনি একটি আবাসিক এলাকায় বাস করছেন, যেখানে অনেক ফাঁকা জায়গা রয়েছে, আর হঠাৎ করেই জানতে পারলেন যে একটি ফাঁকা জায়গার নিচে একটি বিশাল বাঙ্কার লুকানো আছে!”
এই আবিষ্কার নক্ষত্র এবং গ্রহ তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান আরও বাড়াতে সাহায্য করবে।
তথ্য সূত্র: CNN