কুস্তি জগতে এক অতি পরিচিত নাম হল হাল্ক হোগান, যাঁর আসল নাম টেরী বোলেয়া। নব্বইয়ের দশকে কুস্তি ভালোবাসতেন এমন শিশুদের কাছে তিনি ছিলেন এক বিশালমাপের আদর্শ।
পেশাদার কুস্তিগীর হিসাবে তাঁর খ্যাতি ছিল আকাশচুম্বী, কিন্তু তাঁর জীবনটাও ছিল উত্থান-পতনে ভরা। সম্প্রতি, তাঁর জীবন এবং কর্ম নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, কারণ কুস্তি জগৎ এবং এর বাইরের মানুষের উপর তাঁর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
হাল্ক হোগানের চরিত্রটি ছিল খুবই আকর্ষণীয়। তিনি দর্শকদের বলতেন, “নিয়মিত শরীরচর্চা করো, প্রার্থনা করো, ভিটামিন খাও, নিজের প্রতি এবং দেশের প্রতি অনুগত থাকো।”
এই কথাগুলো সেই সময়ের শিশুদের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল। তিনি ছিলেন যেন এক জীবন্ত সুপারহিরো, যিনি সবসময় খারাপ লোকদের বিরুদ্ধে লড়তেন এবং জয়ী হতেন। তাঁর এই ইমেজ তৈরি হওয়ার পেছনে ছিল দর্শকদের ভালোবাসা, যা তাঁকে এনে দেয় আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা।
কিন্তু খ্যাতি এবং সাফল্যের শিখরে থাকা এই মানুষটির জীবনেও আসে অন্ধকার। কুস্তির বাইরে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা তাঁর ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়।
বর্ণবাদী মন্তব্য এবং বিতর্কিত কিছু মন্তব্যের কারণে তিনি সমালোচিত হন। এর ফলস্বরূপ, একসময় তাঁকে ডব্লিউডব্লিউই (WWE) থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তবে, সময় যায়, পরিস্থিতি বদলায়। ২০১৬ সালে, হোগানকে আবার ডব্লিউডব্লিউইতে ফিরিয়ে আনা হয় এবং হল অফ ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
যদিও এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই বিতর্কের জন্ম দেয়। বিশেষ করে, রেসলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত কিছু কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়। তাঁরা মনে করেন, হোগানের পুরনো বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য তাঁর ক্ষমা চাওয়াটা ছিল লোকদেখানো।
হোগানের জীবনের এই দিকগুলো তাঁর চরিত্রকে আরও জটিল করে তোলে। একদিকে, তিনি ছিলেন “হাল্ক” নামক জনপ্রিয় চরিত্রের জন্মদাতা, যিনি শিশুদের কাছে ছিলেন ভালোবাসার পাত্র। অন্যদিকে, তাঁর বিতর্কিত মন্তব্য এবং কাজের জন্য তিনি সমালোচিত হয়েছেন।
পেশাগত জীবনে হোগানের অবদান অনস্বীকার্য। কুস্তি জগৎকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কুস্তিকে বিনোদনের একটি নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ।
তবে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঘটনা তাঁর ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছে।
হাল্ক হোগানের জীবন সবসময় সরল ছিল না। খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছানোর জন্য তাঁকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। শরীরের উপর দিয়ে বয়ে গেছে আঘাতের পর আঘাত।
কুস্তিগীর হিসেবে তাঁর শেষ দিকের পারফর্মেন্স দর্শকদের মনে সেই আগের মতো উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পারেনি। সম্প্রতি, নেটফ্লিক্সে “মানডে নাইট” শো-তে তাঁর শেষ উপস্থিতি দর্শকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। একদিকে যেমন তাঁর প্রতি ভালোবাসা ছিল, তেমনই ছিল তাঁর প্রতি বিরূপ মন্তব্য।
হাল্ক হোগান, একাধারে কুস্তি ইতিহাসের মহানায়ক এবং বিতর্কিত চরিত্র। তিনি কুস্তি জগৎকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে। তবে, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঘটনা তাঁর খ্যাতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। টেরী বোলেয়ার জীবন তাই উত্থান-পতন, খ্যাতি ও সমালোচনার এক জটিল আখ্যান।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।