ব্রিটিশ শিল্পী হুমা ভাবহার কাজ: গিয়াকোমেত্তির সঙ্গে এক নতুন আলোচনা
লন্ডনের বারবিকান আর্ট গ্যালারিতে সম্প্রতি শুরু হয়েছে এক বিশেষ প্রদর্শনী, যেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন শিল্পী হুমা ভাবহার শিল্পকর্মের সঙ্গে রাখা হয়েছে বিশ্বখ্যাত শিল্পী আলবার্তো গিয়াকোমেত্তির কিছু কাজ। এই প্রদর্শনী যেন দুটি ভিন্ন প্রজন্মের শিল্পীর মধ্যে এক আকর্ষণীয় কথোপকথন।
হুমা ভাবহা, যিনি ১৯৬২ সালে করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন, বর্তমানে নিউ ইয়র্ক রাজ্যে বসবাস করেন। তাঁর শিল্পকর্মে সমাজের গভীর ক্ষত, মানুষের ভেতরের যন্ত্রণা এবং সংস্কৃতির নানা দিক অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে ফুটে ওঠে।
ভাবহার কাজে প্রায়শই ভাঙা-গড়া, এলোমেলো গড়নের উপস্থিতি দেখা যায়, যা দর্শকদের মনে গভীর রেখাপাত করে। তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ‘মাস্ক অফ দিমিত্রিওস’।
এই ভাস্কর্যটিতে মানবদেহের অসম্পূর্ণতা এবং ভঙ্গুরতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যা আমাদের অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। ভাঙা চেয়ারের কাঠামো, প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে তৈরি স্তন, কালো কুকুরের হাড়—এসবের মাধ্যমে শিল্পী যেন এক ভিন্ন জগৎ তৈরি করেছেন।
অন্যদিকে, সুইস শিল্পী আলবার্তো গিয়াকোমেত্তি আধুনিক শিল্পের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মানুষের অস্তিত্বের সংকট, একাকীত্ব এবং অনিশ্চয়তা তাঁর কাজের প্রধান বিষয় ছিল।
গিয়াকোমেত্তির দীর্ঘ ও শীর্ণ মানব মূর্তিগুলো যেন যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতীক। বারবিকানে তাঁর ‘ফোর উইমেন অন এ বেস’ এবং ‘স্ট্রাইডিং ফিগারস’–এর মতো বিখ্যাত কাজগুলো দর্শকদের মন জয় করে।
প্রদর্শনীতে গিয়াকোমেত্তির কাজের পাশে ভাবহার শিল্পকর্ম স্থাপন করা হয়েছে, যা দুটি ভিন্ন ধারার শিল্পকলার মধ্যে এক গভীর সংযোগ তৈরি করেছে।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, গিয়াকোমেত্তি যেন এখানে ভাবহার কাজের জন্য একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করেছেন। আবার অনেকের মতে, ভাবহা যেন গিয়াকোমেত্তির চিরায়ত শৈলীকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন।
তাঁর কাজে প্রায়শই আদিমতা ও আধুনিকতার মিশ্রণ দেখা যায়, যা দর্শকদের মধ্যে এক ভিন্ন অনুভূতি সৃষ্টি করে।
ভাবহার ‘ম্যাজিক কার্পেট’–এর মতো কাজগুলি তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার প্রমাণ।
এই শিল্পকর্মে মুঘল কার্পেটের উপর বুট পরিহিত দুটি পায়ের উপস্থিতি, ঔপনিবেশিকতার ধারণা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। তাঁর ‘কা’ বা ‘স্কাউট’–এর মতো মূর্তিগুলি যেন প্রাচীন মিশরের সমাধির কথা মনে করিয়ে দেয়।
এই প্রদর্শনীতে, হুমা ভাবহা যেন শিল্পের চিরাচরিত ধারণাগুলোকে ভেঙে দিয়েছেন। তাঁর কাজ একদিকে যেমন ভয়ঙ্কর, তেমনই আকর্ষণীয়।
তিনি শিল্পের মাধ্যমে আমাদের সমাজের অনেক লুকানো দিক তুলে ধরেন, যা দর্শকদের নতুন করে ভাবতে উৎসাহিত করে। এই প্রদর্শনী শুধু শিল্পকর্মের প্রদর্শনী নয়, বরং দুটি ভিন্ন প্রজন্মের শিল্পীর মধ্যে এক গভীর আলোচনা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান