আতঙ্কের কারণ! মানব বর্জ্য থেকে সার, প্রতিবেশীর প্রতিবাদে তোলপাড়

শিরোনাম: আমেরিকার রাজ্যে মানব বর্জ্য থেকে সার: বাংলাদেশের জন্য কি কোনো শিক্ষা?

গত কয়েক বছরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে একটি বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে – কৃষিতে মানব বর্জ্য থেকে তৈরি সার ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে। এটি একদিকে যেমন কৃষকদের জন্য সারের খরচ কমিয়ে দেয়, তেমনই অন্যদিকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

এই খবরটি বাংলাদেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কারণ উন্নত বিশ্বের এই অভিজ্ঞতা আমাদের দেশের জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে।

ওকলাহোমার ওয়েলস্টন এলাকার বাসিন্দা লেসলি স্টুয়ার্ট জানান, কয়েক বছর আগে তার প্রতিবেশীরা তাদের জমিতে শোধিত মানব বর্জ্য বা ‘স্ল্যাজ’ ব্যবহার করা শুরু করেন। এর ফলে এক তীব্র দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, যা তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।

তিনি বলেন, “গন্ধটা এত তীব্র যে আমার অক্সিজেন মেশিনের ভেতর দিয়েও তা প্রবেশ করে এবং সরাসরি নাকে লাগে, যা আমার জন্য ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন করে তোলে।”

বস্তুত, কৃষিতে মানব বর্জ্য ব্যবহারের এই পদ্ধতিটি নতুন নয়। এটি ‘বায়োসলিডস’ নামেও পরিচিত। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর সম্ভাব্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ‘স্ল্যাজ’-এ পার- এবং পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ (পিএফএএস) -এর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকতে পারে, যা সহজে পরিবেশে ধ্বংস হয় না। এই রাসায়নিকগুলো মাটির নীচে জলকে দূষিত করতে পারে এবং মানুষের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

ওকলাহোমার অনেক কৃষক, যারা এই সার ব্যবহার করেন, তারা জানান, এর ফলে তারা রাসায়নিক সারের তুলনায় একর প্রতি কয়েকশ ডলার সাশ্রয় করতে পারেন। যদিও শহর ও পৌরসভার কর্মকর্তারা বলছেন যে, মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হবে।

উদাহরণস্বরূপ, ওকলাহোমা সিটি কর্তৃপক্ষের মতে, বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করতে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হতে পারে এবং এতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগতে পারে।

তবে, এই বিতর্কের মাঝে ওকলাহোমার আইনপ্রণেতারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে, অঙ্গরাজ্যের একজন প্রতিনিধি, যিনি মানব বর্জ্য থেকে সার ব্যবহারের বিরোধী, তিনি এই পদ্ধতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য চেষ্টা করছেন।

তিনি মনে করেন, এটি একটি জরুরি সমস্যা এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবেশী রাজ্য মেইন ইতোমধ্যে মানব বর্জ্য থেকে সার ব্যবহার সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এই ধরনের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। বাংলাদেশেও বিভিন্ন ধরনের জৈব সার ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে।

তাই, মানব বর্জ্য থেকে তৈরি সারের ব্যবহার ও তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং পরিবেশ সুরক্ষার দিকে নজর রাখা জরুরি। একইসঙ্গে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক ও পরিবেশ-বান্ধব পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার।

বর্তমানে, ওকলাহোমার পরিবেশ বিভাগ যদিও সারের গুণগত মান পরীক্ষা করে, তবে তারা পিএফএএস-এর মতো ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পরীক্ষা করে না। এই প্রেক্ষাপটে, সেখানকার পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে।

তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *