বন্ধু তিমিকে বাঁচাতে অন্য তিমির প্রাণপণ চেষ্টা! ভয়ঙ্কর দৃশ্য

ডুবে যাওয়া বিপদ থেকে বন্ধুদের বাঁচাতে হামব্যাক তিমিদের তৎপরতা।

সমুদ্রে মাছ ধরার জালে আটকা পড়লে হামব্যাক তিমিরা কিভাবে তাদের বন্ধুদের সাহায্য করে, সেই বিষয়ে একটি নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি চ্যানেল আইল্যান্ডসের আচরণবিদ র‍্যাচেল কার্টরাইট এবং তার সহকর্মীরা এই বিরল ঘটনাটি নথিভুক্ত করেছেন।

তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, যখন কোনো তিমি মাছ ধরার জালে আটকা পড়ে, তখন অন্যান্য তিমিরা তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে।

গবেষণায় জানা গেছে, “সঙ্গী তিমি” (Companion Whale) নামক একটি ধারণা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই তিমিরা তাদের আটকে পড়া বন্ধুদের ছাড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করে।

কিছু ক্ষেত্রে, তারা লেজ দিয়ে পানির ওপর আঘাত করে, যেন অন্যদের সতর্ক করতে পারে। আবার, জালে আটকে পড়া তিমিকে অন্য তিমিরা তাদের শরীর দিয়ে উপরে তোলার চেষ্টা করে, যাতে সে শ্বাস নিতে পারে।

এমনকি, তারা বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য হাঙরের মতো শিকারী প্রাণীগুলোকে তাড়িয়েও দেয়।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হাওয়াই এবং আলাস্কায় ৪১৪টি তিমির জালে আটকা পড়ার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ বার “সঙ্গী তিমি” দের সাহায্যের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গবেষকরা বলছেন, এই ঘটনাগুলো তিমির পারস্পরিক সহযোগিতা এবং তাদের বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ।

এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে র‍্যাচেল কার্টরাইট জানান, “একটি তিমি যখন আটকা পড়ে, তখন অন্য তিমিরা তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তাদের এই আচরণ সত্যিই অসাধারণ।”

এছাড়াও, অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির গবেষক ওলাফ মেইনেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে একই ধরনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি জানান, “আমরা দেখেছি, তিমিরা তাদের বন্ধুদের বিপদ থেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে।

তারা যেন বলতে চায়, ‘যদি তুমি ভেসে থাকতে না পারো, তাহলে আমি তোমাকে উপরে তুলব’।”

এই গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো, জালে আটকা পড়া তিমিদের সাহায্য করার এই প্রবণতা শুধুমাত্র তাদের বাচ্চাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বয়স্ক তিমিদের মধ্যেও দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাছ ধরার জালে আটকা পড়া তিমিদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। কারণ, এতে তাদের জীবনহানির ঝুঁকি বাড়ে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা কমানোর জন্য টেকসই এবং পরিবেশ-বান্ধব উপায়ে মাছ ধরা প্রয়োজন।

এই গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য হল, সামুদ্রিক পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীদের রক্ষা করার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। আমাদের সকলেরই উচিত, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য সচেতন হওয়া এবং টেকসই জীবনযাত্রার দিকে মনোনিবেশ করা।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *