ভয়ংকর: মিডিয়া ও এনজিও’দের বিরুদ্ধে কঠোর বিল আনছে হাঙ্গেরি সরকার!

হাঙ্গেরি সরকার তাদের সমালোচক, বিশেষ করে গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন এনজিও’র (অ-সরকারি সংস্থা) বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের দল মঙ্গলবার একটি নতুন বিল উত্থাপন করেছে, যা সরকারের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দেবে।

এই বিলের মাধ্যমে সরকার জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলোর ওপর নজরদারি, তাদের কার্যক্রম সীমিত করা, এমনকি নিষিদ্ধ করারও ক্ষমতা পাবে।

এই বিলটি মূলত হাঙ্গেরির ‘সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা দপ্তর’-এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। দপ্তরটি এমন সব সংগঠন চিহ্নিত করতে পারবে, যেগুলো জনমত গঠন বা ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং যা হাঙ্গেরির স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, এই ধরনের সংগঠনগুলোকে সরকারের নির্দেশে একটি তালিকাভুক্ত করা হবে। এরপর তাদের গুরুত্বপূর্ণ তহবিল বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে এবং বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও করা হতে পারে।

যদি কোনো সংগঠন ‘বিদেশি মদদে’ জনসাধারণের জীবনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন আইনে, অভিযুক্ত সংগঠনগুলোর ব্যাংক হিসাবের ওপর নজরদারি করা যাবে এবং তাদের লেনদেনও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের সরকার ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে। আইনটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, কারণ ক্ষমতাসীন ফিদেজ পার্টির সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

সরকারের চাপ এবং আর্থিক সংকটের কারণে হাঙ্গেরির অনেক স্বাধীন গণমাধ্যম ও এনজিও টিকে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক অনুদানের ওপর নির্ভরশীল। তবে ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া এক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বিদেশি অনুদান গ্রহণকারী সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।

তিনি বলেছিলেন, এই ধরনের সংগঠনগুলোকে ‘সরিয়ে দিতে হবে’ এবং তাদের ‘আইনগতভাবে বিলুপ্ত করা দরকার’।

প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন ধরেই এনজিও এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছেন। সমালোচকরা বলছেন, এর মাধ্যমে নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষাকারী, মানবাধিকার বিষয়ক সহায়তা প্রদানকারী এবং সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া সংগঠনগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই কার্যক্রম আরও জোরদার হয় যখন ২০২৩ সালে ‘সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা দপ্তর’ তৈরি করা হয়। এই দপ্তর বিদেশি প্রভাব বিস্তারের সঙ্গে জড়িত সংস্থা ও গণমাধ্যমগুলোর ওপর তদন্ত করে থাকে।

দপ্তরটির বিদেশি অর্থ গ্রহণকারী যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর তথ্য সংগ্রহের ক্ষমতা রয়েছে এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে। এমনকি হাঙ্গেরির গোয়েন্দা সংস্থাও এই তদন্তে সহায়তা করতে পারে।

আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

সরকারের নীতির বিরোধীরা ‘সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা দপ্তর’-এর সঙ্গে রাশিয়ার ‘বিদেশি এজেন্ট’ আইনের তুলনা করেছেন। তাদের মতে, এটি সরকারের সমালোচকদের, বিশেষ করে এনজিও এবং সাংবাদিকদের, ইচ্ছামতো টার্গেট করতে ব্যবহার করা হতে পারে।

নতুন বিলে সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি’র একটি ব্যাপক সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হাঙ্গেরির গণতান্ত্রিক চরিত্র, জাতীয় ঐক্য, ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক কাঠামো বা খ্রিস্টান সংস্কৃতির মতো বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে কোনো সংগঠন যদি নেতিবাচক ধারণা দেয়, তাহলে তাদের লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে।

এমনকি সরকারের নীতির বৈধ সমালোচনাকেও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া সংগঠনগুলো হাঙ্গেরির ১% ব্যক্তিগত আয়কর প্রোগ্রামের মাধ্যমে অনুদান গ্রহণ করতে পারবে না। এছাড়া বিদেশি অনুদান গ্রহণের জন্য জাতীয় রাজস্ব কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে।

কোনো হাঙ্গেরীয় নাগরিক যদি তালিকাভুক্ত কোনো সংস্থাকে অনুদান দেন, তাহলে তাকে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হবে যে, তাঁর এই অনুদানের উৎস বিদেশ থেকে আসেনি।

বিদেশি সাহায্য গ্রহণ করে এমনটা প্রমাণিত হলে, সংশ্লিষ্ট সংগঠনকে পাওয়া অনুদানের ২৫ গুণ পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *