ইসরায়েলের নেতানিয়াহুর সফরেই কিউ ছাড়ছে হাঙ্গেরি? তোলপাড়!

হাঙ্গেরি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর হাঙ্গেরি সফরের প্রাক্কালে বুদাপেস্ট এই ঘোষণা দেয়। উল্লেখ্য, গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার হাঙ্গেরির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা আইসিসি থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের চিফ অব স্টাফ গার্গেলি গুলিয়াস এক ফেসবুক পোস্টে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি জানান, সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের কাঠামোর মধ্যে থেকেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

এর আগে, ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তখন থেকেই হাঙ্গেরি আইসিসি থেকে বের হয়ে আসার বিষয়টি বিবেচনা করছিল। প্রধানমন্ত্রী অরবান এক বিবৃতিতে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক সংস্থাটিতে হাঙ্গেরির কার্যক্রম পর্যালোচনা করার সময় এসেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন ফিদেজ পার্টির সমর্থনে হাঙ্গেরির পার্লামেন্টেও এই প্রস্তাব সহজেই পাস হয়ে যাবে। যদিও, হাঙ্গেরির এই ঘোষণার ওপর আইসিসির পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো দেশ আইসিসি থেকে বের হতে চাইলে, জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার সংক্রান্ত দলিল জমা দেওয়ার এক বছর পর সেই প্রক্রিয়া কার্যকর হয়। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র বুরুন্ডি এবং ফিলিপাইন এই আদালত থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহু ২০২৩ সালের পর প্রথম ইউরোপ সফরে বৃহস্পতিবার সকালে বুদাপেস্টে পৌঁছান। তার বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও এই সফর অনুষ্ঠিত হলো। ইসরায়েল অবশ্য আইসিসির এই অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তারা বলছে, আদালতের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইহুদিবিদ্বেষী। ইসরায়েলের মতে, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনো দেশের নেতার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি তার বৈধতা হারিয়েছে।

গত নভেম্বরে, আইসিসি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির এক দিন পরেই অরবান তাকে হাঙ্গেরি সফরের আমন্ত্রণ জানান। এমনকি, হাঙ্গেরি সরকার জানিয়েছিল, তারা আইসিসির সদস্য হলেও এই পরোয়ানা কার্যকর করবে না। তাদের মতে, আদালতের এই সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ একটি চলমান সংঘাতে হস্তক্ষেপের শামিল।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির বিষয়ে আইসিসির বিচারকরা জানান, গাজায় বেসামরিক জনগণের ওপর ‘ব্যাপক ও পদ্ধতিগত হামলার’ অংশ হিসেবে নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গণহত্যার মতো অপরাধের জন্য দায়ী। তবে, আদালতের মুখপাত্র ফাদি এল আব্দাল্লাহ বলেন, আইসিসির কোনো সিদ্ধান্তের যথার্থতা নির্ধারণ করার একচ্ছত্র অধিকার কোনো সদস্য রাষ্ট্রের নেই।

উল্লেখ্য, হাঙ্গেরি ১৯৯৯ সালে রোম সংবিধি স্বাক্ষর করে এবং দুই বছর পর, অরবান প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এটি অনুমোদন করে। তবে গুলিয়াস জানিয়েছেন, যদিও হাঙ্গেরি আইসিসির রোম সংবিধি অনুমোদন করেছে, এটি ‘হাঙ্গেরির আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি’।

এর অর্থ হলো, আদালতের কোনো পদক্ষেপ হাঙ্গেরিতে কার্যকর করা যাবে না।

তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *