সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, খ্যাতি অর্জনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যেখানে কিশোর-কিশোরীরাও ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ বা প্রভাবক হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। তবে, এই আলো ঝলমলে জগতের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে অনেক অজানা কাহিনী।
সম্প্রতি, জনপ্রিয় ইউটিউবার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হান্টার হিল এবং কিশোরী তারকা পাইপার রকেলের একটি দলের (Squad) বিরুদ্ধে ওঠা কিছু অভিযোগ নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
হান্টার হিল মূলত পাইপার রকেলের অনলাইন জগৎ তৈরি ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাইপারের মা, টিফানি স্মিথের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল এবং তাঁরা দুজনে মিলেই পাইপারের ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য কিশোর কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের চ্যানেল তৈরি করতেন।
জানা যায়, একসময় হিলকে পাইপারের ভাই হিসেবেও পরিচয় করানো হতো, যদিও তাঁদের মধ্যে কোনো পারিবারিক সম্পর্ক ছিল না।
পেশাগত জীবনে, হিল প্রাথমিকভাবে একজন ইউটিউবার হতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে (L.A.) পাড়ি জমান এবং পাইপার ও তাঁর মায়ের সঙ্গে পরিচিত হন।
এরপর তিনি পাইপারের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও তৈরি ও সম্পাদনার কাজ শুরু করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অন্যান্য ‘স্কোয়াড’ সদস্যদের চ্যানেলও পরিচালনা করতেন এবং তাঁদের আয়ের একটি অংশ নিতেন।
২০২২ সালে, ‘স্কোয়াড’-এর প্রাক্তন ১১ জন সদস্য টিফানি স্মিথ এবং হান্টার হিলের বিরুদ্ধে প্রায় ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি মামলা দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল মানসিক, শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, স্মিথ তাঁদের অশ্লীল মন্তব্য করতে এবং ভিডিওতে ‘যৌন আবেদনময়ী’ হওয়ার জন্য উৎসাহিত করতেন। যদিও হিল এবং স্মিথ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মামলার শুনানির পরে, উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসায় আসে এবং আদালত তাঁদের ১.৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি আপোস রফা অনুমোদন করে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে, নেটফ্লিক্স-এ মুক্তি পাওয়া একটি তথ্যচিত্র, “ব্যাড ইনফ্লুয়েন্স: দ্য ডার্ক সাইড অফ কিডফ্লুয়েন্সিং” (Bad Influence: The Dark Side of Kidfluencing) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তথ্যচিত্রে স্কোয়াডের সদস্য জেন্টজেন রামিরেজের মা জোহানা রামিরেজ অভিযোগ করেন, ভিডিওর জন্য হিল এবং স্মিথ এমন কিছু কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন যা সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, শিশুদের গ্রেপ্তার করার ভান করে অভিনেতা ভাড়া করা হয়েছিল।
বর্তমানে হান্টার হিলের অবস্থান জানতে অনেকেই আগ্রহী। জানা যায়, তিনি এখনো সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় রয়েছেন এবং পাইপার রকেলের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত পাইপারের সঙ্গে তাঁর কিছু ভিডিও দেখা যায়। এছাড়া, তিনি মাঝে মাঝে ইনস্টাগ্রামে ছবি পোস্ট করেন, যেখানে পাইপারের সঙ্গে তাঁর ছবিও দেখা যায়।
নভেম্বরে, তিনি পাইপারকে কাঁধে নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, “এই মেয়ের জন্য আমি কতটা কৃতজ্ঞ, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।”
সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে শিশুদের অংশগ্রহণে অভিভাবকদের সচেতনতা এবং সুরক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অল্প বয়সেই খ্যাতি এবং অর্থের হাতছানি অনেক সময় শিশুদের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।
তাই, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হলে, অভিভাবকদের পাশাপাশি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও এগিয়ে আসা উচিত।
তথ্য সূত্র: পিপল