মেক্সিকোতে আঘাত হেনেছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় এরিক, যার জেরে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ওআক্সাকা রাজ্যে আঘাত হানে এই ঘূর্ণিঝড়টি। আবহাওয়াবিদদের মতে, সময়ের হিসেবে মেক্সিকোতে এত আগেCategory 3 মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঘটনা নজিরবিহীন।
এর আগে গত বছর অক্টোবরে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ওটিসের ক্ষত এখনো তাজা, তার মাঝেই নতুন এই দুর্যোগের আশঙ্কা।
ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (National Hurricane Center) সূত্রে জানা গেছে, এরিক ঘন্টায় প্রায় ১২৫ মাইল বেগে ওআক্সাকা রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আসার আগেCategory 4 মাত্রায় পৌঁছেছিল, যার অর্থ হলো এটি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঐ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এরিক দুর্বল হয়ে পড়লেও এর বৃষ্টিপাতের কারণে মারাত্মক বন্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় এবং অতিবৃষ্টির মতো ঘটনাগুলো বাড়ছে। এরিক মেক্সিকোর জন্য একটি সতর্কবার্তা, কারণ মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হওয়া ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে এটি পঞ্চম ঘূর্ণিঝড় এবং দ্বিতীয় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।
সাধারণত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে এমন ঘটনা ঘটে থাকে।
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাম জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গুয়েরেরো ও ওআক্সাকা উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকতে এবং কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে, বুধবার রাতে ঐ অঞ্চলের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছিল।
আকাপুলকোর সমুদ্রবন্দর ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুয়েরেরো রাজ্যের গভর্নর ইভলিন সালগাদো জানিয়েছেন, বুধবার রাত আটটা থেকে আকাপুলকোসহ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজ্যের স্কুলগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য গুয়েরেরোতে ৫৮২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, এরিকের প্রভাবে গুয়েরেরোর পার্বত্য অঞ্চলে আগামী কয়েকদিনে প্রায় ১৬ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
ওআক্সাকা ও গুয়েরেরোর উপকূলীয় অঞ্চলে আট ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। আকাপুলকোতেও ছয় ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে।
আকাপুলকোর বাসিন্দারা এখনো গত বছরের ঘূর্ণিঝড় ওটিসের ক্ষত থেকে সেরে উঠতে পারেনি। ওটিস আঘাত হানার সময়Category 5 মাত্রায় পৌঁছেছিল এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটিয়েছিল।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, “কর্তৃপক্ষের সতর্কবার্তা আমাদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করছে, কারণ এর মাধ্যমে আমরা অতীতের সেই কঠিন দিনগুলোর কথা মনে করতে পারছি।”
এই দুর্যোগ মেক্সিকোর জন্য একটি কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তবে বাংলাদেশের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
কারণ, বাংলাদেশও একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ, যেখানে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত ঘটে থাকে। তাই, দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি এবং সচেতনতা বাড়ানো খুবই জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন