নিউ অরলিন্সের শিক্ষকদের জীবনে ক্যাটরিনার ধ্বংসলীলা: ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা!

ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার ক্ষত: নিউ অরলিন্সের শিক্ষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে।

নিউ অরলিন্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র: আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগের কথা। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনা যেন এক লহমায় বদলে দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অরলিন্সের শিক্ষাব্যবস্থা। ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল শহরের স্কুলগুলো, শিক্ষার্থীদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরেছিল।

কিন্তু সেই দুর্যোগের মধ্যে থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানকার শিক্ষক ও শিক্ষকরা। ক্যাটরিনার সেই ধ্বংসলীলা কিভাবে কয়েকজন শিক্ষকের জীবন বদলে দিয়েছে, সেই গল্পই আজ শোনাবো।

নিউ অরলিন্সের একটি স্কুলের শিক্ষক ক্রিস ডিয়ার। ক্যাটরিনার সময় তিনি হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন।

ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সেখানকার শিক্ষকরা। ক্রিসের শিক্ষকতা জীবনের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন সেই মানুষগুলোই।

ক্রিস ডিয়ার বলেন, “ক্যাটরিনার সময় আমরা যখন আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম, সেখানকার শিক্ষকরা আমাদের পড়াশোনার সমস্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করেছিলেন। এমনকি আমাদের ভালোমতো থাকার ব্যবস্থাও করেছিলেন তারা। তাদের সেই ত্যাগ আর ভালোবাসাই আমাকে শিক্ষক হতে উৎসাহিত করেছে।”

ক্যাটরিনার পর নিউ অরলিন্সের শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর জায়গায় গড়ে ওঠে নতুন নতুন চার্টার স্কুল।

চার্টার স্কুল হল সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত, কিন্তু সরকারি নিয়মের বাইরে থাকা স্কুল ব্যবস্থা।

আরেকজন শিক্ষক, জাহকুইল রস, ক্যাটরিনার সময় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ঝড়ের কারণে তাদের শহর ছাড়তে হয়েছিল।

উদ্বাস্তু জীবনে তিনি ভালোমতো পড়াশোনা করতে পারছিলেন না। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল তাকে।

তবে পরবর্তীতে তিনি ফিরে আসেন নিউ অরলিন্সে এবং শিক্ষকতার পেশা বেছে নেন।

জাহকুইল বলেন, “ক্যাটরিনার পর আমি বুঝতে পেরেছিলাম, শিশুদের সঠিক পথে চালিত করতে হলে একজন শিক্ষকের কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তাই আমি চেয়েছিলাম, এখানকার শিশুদের জন্য কিছু করতে, তাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে।”

মিসেস মিশেল গার্নেট ছিলেন একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক। ক্যাটরিনার আঘাতে তার স্কুল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

তিনি বলেন, “আমার চোখের সামনে সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। সেই স্মৃতি আজও আমাকে কষ্ট দেয়। তবে আমি চেষ্টা করি, আমার ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবেসে তাদের জীবনকে সুন্দর করে তুলতে।”

ক্যাটরিনার স্মৃতি আজও নিউ অরলিন্সের মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। কিন্তু সেই দুর্যোগ মোকাবিলায় সেখানকার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য ইচ্ছাই ছিল সবচেয়ে বড় শক্তি।

তাদের এই ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প আমাদের দেশের জন্যও শিক্ষণীয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমাদের দেশেও অনেক সময় শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

তথ্য সূত্র: আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *