প্রবল ঘূর্ণিঝড় “মেলিসা”র আঘাতে লণ্ডভণ্ড ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ। জ্যামাইকা এবং কিউবার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে ভূমিধস এবং আকস্মিক বন্যাকে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, এই বিধ্বংসী পরিস্থিতির জন্য বহু বছরের বনভূমি ধ্বংস একটি প্রধান কারণ। খবর অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে গাছপালা উপড়ে যাওয়ায় এবং মাটির ক্ষয় হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্যামাইকা এবং কিউবার অনেক অঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকি আগে থেকেই ছিল। কিন্তু বনভূমি ধ্বংসের কারণে সেই ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে গেছে।
গাছপালা মাটির স্তরকে ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং বৃষ্টির জল শুষে নেয়। ফলে ভূমিধস এবং বন্যার সম্ভাবনা কমে যায়। কিন্তু গাছ না থাকায় এই প্রক্রিয়াগুলি ব্যাহত হয়েছে, যার ফলস্বরূপ ব্যাপক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
জ্যামাইকাতে ঝড়ের তাণ্ডবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে, যেখানে জরুরি বিভাগের কর্মীরা দুর্গতদের কাছে পৌঁছাতে হিমশিম খাচ্ছেন। খবর অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সরকার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা করছে এবং রাস্তাঘাট পরিষ্কার করার জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে।
কিউবার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক। সেখানকার বাসিন্দারা ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে নেমেছেন এবং সামরিক বাহিনী দুর্গতদের উদ্ধারে সহায়তা করছে।
উভয় দেশেই ভূমিধসের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুর্গত এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্যামাইকার প্রায় অর্ধেক এলাকা ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো এখানকার পাহাড়-পর্বত এবং ভূমিকম্পপ্রবণ ভূমি।
১৯৯০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জ্যামাইকা তার প্রায় ৭.৪ শতাংশ বনভূমি হারিয়েছে। বনভূমি ধ্বংসের পেছনে কৃষি জমি তৈরি এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজগুলো প্রধান কারণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এবং ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়েছে। উষ্ণ জলবায়ুর কারণে সমুদ্রের জল আরও উষ্ণ হচ্ছে, যা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, “মেলিসা” আঘাত হানার সময় কিছু এলাকার সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল, যা ঝড়ের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্যারিবিয়ান ন্যাচারাল রিসোর্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক নিকোল লেওটাউড জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলে প্রায়ই বন্যা দেখা যায়, যা জীবনহানির কারণ হয়।
তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেক ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে এখানকার মানুষ আতঙ্কে থাকে।
আবহাওয়াবিদ এবং পরিবেশবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো ঘূর্ণিঝড়প্রবণ দেশগুলোর জন্য এই পরিস্থিতি একটি সতর্কবার্তা। আমাদের দেশেও বনভূমি ধ্বংস একটি বড় সমস্যা।
এর ফলে ভূমিধস এবং বন্যার ঝুঁকি বাড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, তাই আমাদের এখনই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস
 
                         
                         
                         
                         
                         
                         
				
			 
				
			 
				
			 
				
			