স্বামীর প্রাক্তন সহকর্মীর প্রতি স্ত্রীর তীব্র ঈর্ষা: কিভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেবেন?
আজকের সমাজে দাম্পত্য কলহ একটি সাধারণ সমস্যা। অনেক সময় সামান্য বিষয় থেকেও সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরতে পারে।
তেমনই একটি ঘটনার কথা জানা গেছে, যেখানে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী তাঁর স্বামীর প্রাক্তন সহকর্মীর প্রতি তীব্র ঈর্ষা অনুভব করছেন। তাঁদের দাম্পত্য জীবন ত্রিশ বছরের, ভালোবাসায় ভরপুর এবং সুখী।
কিন্তু এই সুখের সংসারেও যেন একটা অদৃশ্য কাঁটা গেঁথে রয়েছে— স্বামীর এক প্রাক্তন সহকর্মী।
বছর কয়েক আগে, স্বামীর কর্মক্ষেত্রে কয়েকজন তরুণ সহকর্মীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তাদের মধ্যে অ্যান নামের এক নারী ছিলেন, যাঁর সঙ্গে স্বামীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়।
ধীরে ধীরে সেই সম্পর্ক অফিসের গণ্ডি পেরিয়ে দুপুরের খাবার, নিয়মিত আড্ডা, এমনকি ডিনার পর্যন্ত গড়ায়।
স্ত্রীর মনে হতে থাকে, তাঁর স্বামী যেন ক্রমশ সেই নারীর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। “অ্যান তো এটা খুব ভালো পারে, তুমি কেন অ্যানের মতো সবজি রান্না করো না?”—এমন কথায় স্ত্রীর মনে গভীর হতাশা জন্ম নেয়।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল। অ্যান ছিলেন তরুণ, সুন্দরী এবং হাসিখুশি একজন মানুষ, যাঁর সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে গিয়ে তিনি হতাশ হয়ে পড়তেন।
এর ফলস্বরূপ, তাঁদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। একসময় স্বামী অন্য চাকরি নেওয়ায় তাঁদের সেই আগের মতো দেখা হয় না।
তিনি স্ত্রীর মানসিক কষ্টের কথা বুঝতে পারেন এবং প্রাক্তন সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করাও বন্ধ করে দেন।
কিন্তু সমস্যা সম্পূর্ণ মিটে যায়নি। স্বামীর পুরনো কর্মজীবনের বন্ধুদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ আছে, এবং তাদের সঙ্গে দেখা হলে, বিশেষ করে জ্যাকের সঙ্গে সময় কাটালে, স্ত্রী জানতে পারেন যে অ্যান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
যদিও স্বামী তাঁর উদ্বেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তিনি সবসময় সত্যি কথা বলেন এবং কোনোভাবে দেখা হয়ে গেলে তা স্ত্রীকে জানান।
এমনকি, অ্যানের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি কোনো আগ্রহও দেখান না।
তবুও, স্ত্রীর মনে গভীর ঈর্ষা বাসা বাঁধে। যখনই তিনি অ্যানের নাম শোনেন, তখনই তাঁর মধ্যে রাগ, ঘৃণা এবং তীব্র ঈর্ষা অনুভব হয়, যা তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।
তিনি জানেন, তাঁর এই আবেগ নিয়ন্ত্রণে আনা উচিত। কিন্তু কিছুতেই তিনি তা পারেন না।
বরং, তিনি অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখান এবং সবসময় এই ভয়ে থাকেন যে তাঁর স্বামী হয়তো আবারও অ্যানের প্রেমে পড়বেন এবং তাঁকে ছেড়ে চলে যাবেন।
একজন মনোবিদের মতে, এই ধরনের তীব্র অনুভূতির কারণ হলো গভীর মানসিক আঘাত, যা হয়তো অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত।
তাঁর মতে, এই নারীর আত্ম-সম্মানে হয়তো চিড় ধরেছে। সম্ভবত ছোটবেলায় এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে তিনি নিজেকে অসহায় এবং পরিত্যক্ত অনুভব করেছিলেন।
সেই অনুভূতিগুলোই হয়তো এখানে আবার ফিরে আসছে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হলো, এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। নিজের ভেতরের গভীর ক্ষতগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং সেগুলোর মোকাবিলা করতে হবে।
নিজের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করা এবং আত্ম-অনুসন্ধান করাটা খুব জরুরি।
স্বামী সবসময় পাশে আছেন, এটা মনে রেখে নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে।
যদি আপনারও এমন কোনো সমস্যা থাকে, তবে একজন অভিজ্ঞ কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, নিজের সঙ্গীর সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং তাঁর অনুভূতিকে সম্মান করাটাও জরুরি।
মনে রাখতে হবে, ভালোবাসার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধাবোধ অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান