ডুবুরি স্বামীর স্মৃতি: ভালোবাসার সমাধিস্থল, সমুদ্রের গভীরে!

হাওয়াই দ্বীপে ডুব দিতে গিয়ে স্বামীর মৃত্যু, সমুদ্রের গভীরে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করলেন স্ত্রী।

হাওয়াই দ্বীপের নীল জলরাশির নিচে স্বামীর স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন অ্যাশলি বুগে। ২০১৮ সালের ২০ মে, ব্রায়ান বুগে নামের তার স্বামী এক দুর্ঘটনায় মারা যান। পেশায় স্কুবা ডাইভার ব্রায়ান, বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় অক্সিজেনের অভাবে সমুদ্রের গভীরে তলিয়ে যান। এরপর শোকের গভীরতা থেকে উঠে এসে অ্যাশলি, স্বামীর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন।

ঘটনার দিন সকালে, ব্রায়ান ডুব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু বিধি বাম! অক্সিজেনের সরবরাহ চালু করতে ভুলে যাওয়ায়, অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনাটি। খবর পাওয়া মাত্র অ্যাশলি হাসপাতালে ছুটে যান, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। স্বামীর মৃত্যুর খবরে তিনি যেন পাথর হয়ে গিয়েছিলেন।

স্বামীকে হারানোর পর অ্যাশলি যেন নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। কীভাবে তিনি ব্রায়ানের ভালোবাসার স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখবেন? অবশেষে তিনি এক অভিনব উপায় খুঁজে বের করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার ‘লিভিং রিফ মেমোরিয়াল’ নামের একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে, ব্রায়ানের চিতাভস্ম দিয়ে সমুদ্রের গভীরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেন।

এই ‘মেমোরিয়াল রিফ’ তৈরি করা হয় বিশেষ উপাদানে, যা সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং এটি সামুদ্রিক জীবনের বিকাশে সহায়তা করে। ব্রায়ানের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে তৈরি এই স্তম্ভটি, সমুদ্রের গভীরে স্থাপন করা হয়। অ্যাশলি এবং তার সন্তানেরা প্রতি বছর এই দিনে সেখানে যান, তাদের প্রিয় মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

ব্রায়ানের ভালোবাসার জগৎ ছিল সমুদ্রকে ঘিরে। তাদের প্রথম দেখা থেকে শুরু করে, বিয়ের প্রতিটি মুহূর্ত—সবকিছুতেই সমুদ্রের একটা বিশেষ স্থান ছিল। ব্রায়ান ছিলেন একজন দক্ষ ডুবুরি, যিনি ভালোবাসতেন সমুদ্রের গভীরে ডুব দিতে। অ্যাশলিও স্বামীর এই ভালোবাসাকে সবসময় সম্মান করতেন।

অ্যাশলি বর্তমানে সন্তানদের নিয়ে ওয়াশিংটনে বসবাস করেন। তিনি ওশান সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং বর্তমানে ‘দি সিবার্ডস’ নামে একটি অলাভজনক সংস্থা চালান, যেখানে তরুণদের সমুদ্র বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। তিনি তার জীবন ও ব্রায়ানকে হারানোর শোক নিয়ে একটি স্মৃতিকথাও লিখেছেন, যার নাম ‘অলওয়েজ কামিং ব্যাক হোম’। অ্যাশলি মনে করেন, এই গল্প অন্যদেরও শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

ব্রায়ানের মৃত্যুর পর, অ্যাশলি সমুদ্রের প্রতি তার ভালোবাসাকে আরও গভীর করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সমুদ্রই তাদের ভালোবাসার গল্পকে বাঁচিয়ে রাখবে। সমুদ্রের গভীরে স্বামীর স্মৃতিস্তম্ভ, তাদের ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *