**যুক্তরাষ্ট্রে একটি নির্মাণস্থলে অভিযান, প্রায় ৫০০ শ্রমিক আটক**
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের একটি নির্মাণস্থলে অভিবাসন বিভাগের অভিযানে প্রায় ৫০০ শ্রমিককে আটকের ঘটনা ঘটেছে। আটকদের মধ্যে বেশিরভাগই দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ছিলেন। জানা গেছে, আটকদের মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল অথবা তারা ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেছেন। এই ঘটনার জেরে নির্মাণাধীন একটি বিশাল শিল্প প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে জর্জিয়ার এলাবেলে, যেখানে হুন্দাই-এলজি’র যৌথ উদ্যোগে একটি ব্যাটারি প্ল্যান্ট তৈরি হচ্ছে। এই প্রকল্পে প্রায় ৮,৫০০ মানুষের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিবাসন বিভাগের আকস্মিক অভিযানে নির্মাণ শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অভিযানকালে কর্মকর্তাদের নির্মাণ শ্রমিকদের সারিবদ্ধ করে পরিচয় যাচাই করতে দেখা যায়। এরপর যাদের আটকের সিদ্ধান্ত হয়, তাদের বাসে করে আটক কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়া হয়।
আটকের শিকার হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে অনেকের অভিযোগ, তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ আটকের হাত থেকে বাঁচতে নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে ছিলেন। এই ঘটনার জেরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এলাবেলের একটি ভিয়েতনামী মুদি দোকানের মালিক জানান, কোরিয়ান শ্রমিকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় তার ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং আটকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন এবং ওয়াশিংটনের কাছে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আটককৃত শ্রমিকদের দেশে ফেরানোর জন্য একটি বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আটকের শিকার হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে কয়েকজন মেক্সিকান নাগরিকও ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিভাগ (ICE) জানিয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে একজন স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন, যিনি আগে অস্ত্র ও মাদক সংক্রান্ত অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয় কিছু মানুষ হুন্দাই প্ল্যান্টের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষোভকারীরা আটকদের মুক্তি এবং অভিবাসন নীতির পরিবর্তনের দাবি জানান। তারা অভিযোগ করেন, এই ধরনের অভিযান শ্রমিক শ্রেণির উপর সরাসরি আঘাত।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘটনার ফলে শ্রমিকদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে স্থানীয় অর্থনীতিতে। ভবিষ্যতে এই প্ল্যান্টের নির্মাণকাজ কত দ্রুত সম্পন্ন হবে, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এই ঘটনা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অভিবাসন নীতির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন