ইবিজা: স্পেনের এই দ্বীপের অজানা ইতিহাসে ভ্রমণের সুযোগ।
পশ্চিমের দেশগুলোতে ভ্রমণের সুযোগ সবসময়ই আমাদের আকৃষ্ট করে। পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় ইবিজা দ্বীপের নাম বেশ পরিচিত, বিশেষ করে এর সমুদ্র সৈকত আর রাতের ক্লাবগুলোর জন্য।
তবে, ইবিজা দ্বীপের একটি ভিন্ন দিকও রয়েছে যা হয়তো অনেকেরই অজানা। এখানকার ঐতিহাসিক শহর, যা স্থানীয়দের কাছে ‘ইভিসা’ নামেই পরিচিত, পর্যটকদের জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
ইবিজা টাউন, যা সাদা দ্বীপ নামেও পরিচিত, ৮ম শতকে ফোনিনিয়ানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সময়ের সাথে সাথে ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের আগমন ঘটেছে এখানে, এবং তাদের সংস্কৃতির ছাপ আজও বিদ্যমান।
এখানকার পুরনো শহর ‘ডাল ভিলা’, যা ইউনেস্কো-র তালিকাভুক্ত, তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। নভেম্বরের শুরু থেকে ইস্টার পর্যন্ত সময়ে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে, যা এই শহর ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়।
ডাল ভিলার সরু পথ, সাদা দেয়াল এবং বারান্দা থেকে ঝুলে থাকা ফুলের গাছগুলোর দৃশ্য যেকোনো ভ্রমণকারীর মন জয় করে নেয়। এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ষোড়শ শতকে নির্মিত দুর্গের প্রাচীর, যা একসময় জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে শহরকে রক্ষা করত।
এছাড়াও, এখানে রয়েছে ‘ক্যাথেড্রাল ডি’ইভিসা’, যা গথিক স্থাপত্যের এক দারুণ উদাহরণ এবং একসময়ের মসজিদ এর স্থানে নির্মিত। এই শহরের ইসলামিক সংস্কৃতির ইতিহাস জানতে, ‘সেন্টার ডি’ইন্টারপ্রিটাসিওন মাদিনা ইয়াবিসা’ জাদুঘরটি ভ্রমণ করা যেতে পারে।
৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে ইবিজা শহর কিভাবে ইসলামী শাসনের অধীনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল, তা এই জাদুঘরে প্রদর্শিত বিভিন্ন নিদর্শন ও অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনার মাধ্যমে জানা যায়।
ডাল ভিলার উঁচু স্থান থেকে শহরের টেরাকোটা রঙের ছাদ এবং মেরিনার ঝলমলে দৃশ্য দেখা যায়। এখানকার ‘প্লাজা দেল সোল’ জায়গাটি ছবি তোলার জন্য বেশ জনপ্রিয়।
এখানে বসে ক্যাভা পান করার মজাই আলাদা, সাথে ইবেরিকো হ্যামের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, ‘মুসিউ ডি’আর্ট কনটেম্পোরানি ডি’ইভিসা’য় বিংশ শতাব্দীর শিল্পকলার বিভিন্ন নিদর্শন দেখা যায়।
ডাল ভিলার প্রধান প্রবেশদ্বার ‘পোর্টাল দে সেস টেবলস’ দিয়ে প্রবেশ করার পর, পুরনো শহরটি সমুদ্রের কাছাকাছি চলে আসে। এখানে ‘লা মারিনা’ অঞ্চলে, ‘প্লাজা দে লা কনস্টিটিউসিওন’ নামের একটি জায়গায় অনেকগুলো বার রয়েছে, যেখানে পর্যটকদের আনাগোনা দেখা যায়।
এখানকার ‘মার্কেট ভেল’ একটি পুরনো বাজার, যেখানে স্থানীয় জলপাই তেল, লবণ এবং বিভিন্ন মৌসুমি খাদ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও, ভিনটেজ পোশাকের জন্য ‘হোলালা ইবিজা’ এবং পাম গাছের তৈরি ব্যাগ ও পোশাকের জন্য ‘ইবিজা বাগুস’-এর মত দোকানগুলোও ঘুরে দেখা যেতে পারে।
ইবিজা টাউনের প্রধান সড়ক ‘পাসেইজ দে ভারা দে রে’-তে ক্যাফে, বার এবং রেস্টুরেন্টগুলোর উপস্থিতি এই স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ১৯৩০-এর দশকে প্রতিষ্ঠিত ‘মন্টেসল এক্সপেরিমেন্টাল’ হোটেলটি একসময় অর্সন ওয়েলসের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের আতিথেয়তা জুগিয়েছিল।
এখানকার ছাদের উপরে অবস্থিত বার থেকে ডাল ভিলার সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। এছাড়াও, ‘প্লাজা দেল পার্ক’ এবং ‘বর্ন’ -এ স্থানীয়রা ইবিসেনকো ওয়াইনারি থেকে সংগ্রহ করা ওয়াইন এবং ব্যালেরিক পনিরের স্বাদ নিতে আসে।
যারা হালকা খাবারের ভক্ত, তারা ‘লা বাররা দে লা বিয়েনতিরাদা’র দোকানে যেতে পারেন। তাদের আলু দিয়ে তৈরি টর্টিলা পিনক্সো (এক ধরনের বাস্কে-শৈলীর খাবার) খুবই জনপ্রিয়।
অবশ্য, ইবিজা টাউনের কেন্দ্রস্থলে থাকলেও সমুদ্র সৈকত খুব বেশি দূরে নয়। ‘লা মারিনা’র আশেপাশে হেঁটে ৩০ মিনিটের মধ্যে ‘প্লাজা দে টালামাঙ্কা’র মতো সুন্দর সৈকতগুলোতে যাওয়া যেতে পারে, যেখানে সমুদ্রের নীল জলরাশি ভ্রমণকারীদের মনকে শান্তি এনে দেয়।
সুতরাং, যারা ইবিজার পরিচিত ছবিটির বাইরে, এর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক দিকটি অনুভব করতে চান, তাদের জন্য ইবিজা টাউন হতে পারে একটি অসাধারণ গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক