আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) টেস্ট ক্রিকেটে দুটি স্তরের কাঠামো তৈরি করার বিতর্কিত পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করতে যাচ্ছে।
এই গ্রীষ্মে শুরু হতে যাওয়া পরবর্তী বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ (ডব্লিউটিসি) আগের মতোই, অর্থাৎ ৯ দলের অংশগ্রহণে একক লিগ হিসেবেই অনুষ্ঠিত হবে।
জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিতব্য আইসিসির সভায় এই বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, তবে জানা গেছে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত দুটি স্তরের কাঠামো নিয়ে এখনো ভোটাভুটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মূলত খেলাটির আর্থিক ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে এর প্রভাবগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করার জন্য আইসিসিকে আরো কিছু সময় দিতে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৭-২০২৯ চক্রের পরিকল্পনা শুরু হলে বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আসতে পারে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব ছিল, টেস্ট ক্রিকেটে দুটি বিভাগে ৬টি করে দল রাখা।
এক্ষেত্রে আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড এবং জিম্বাবোয়ে-কে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল।
কিন্তু অন্য দলগুলোর মধ্যে, বিশেষ করে তথাকথিত ‘বিগ থ্রি’-র (ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড) থেকে তারা আরও পিছিয়ে পড়তে পারে—এমন একটা আশঙ্কা কাজ করছে।
তাই তারা আর্থিক পুনর্বণ্টন এবং দলগুলোর পদোন্নতি ও অবনমন সম্পর্কিত বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চাইছে।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে (ডব্লিউটিসি) অংশগ্রহণের যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য পয়েন্ট সিস্টেমের কিছু পরিবর্তনের বিষয়েও আইসিসি আলোচনা করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, একটি দল কত ব্যবধানে জিতল, তার ভিত্তিতে বোনাস পয়েন্ট দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
রাগবি ইউনিয়নে এমনটা দেখা যায়।
এছাড়া, প্রতিপক্ষের শক্তির বিচারে পয়েন্টের গুরুত্ব বাড়ানো এবং প্রতিপক্ষের মাঠে জেতার জন্য অতিরিক্ত পয়েন্ট দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, খেলার সময় কমানোর বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
সম্প্রতি, ইংল্যান্ডের ক্রিকেট পরিচালক রব কী আইসিসির কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন, যেখানে খেলার গতি কমানোর জন্য শাস্তি আরও কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমানে, স্লো ওভার রেটের কারণে বেশ কয়েকটি দলকে জরিমানা দিতে হয়েছে, যার মধ্যে ইংল্যান্ড অন্যতম। তারা তাদের প্রচারাভিযানে ২২ পয়েন্ট হারিয়েছে।
টেস্ট ক্রিকেটে স্লো ওভার রেটের সমস্যা অনেক দিনের।
ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক বেন স্টোকস গত ডিসেম্বরে এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।
খেলার নিয়ম অনুযায়ী, ফিল্ডিং দলগুলিকে প্রতি ঘণ্টায় ১৫ ওভার বোলিং করতে হয়।
তবে, স্লো ওভার রেটের কারণে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে।
অনেক সময় দেখা যায়, স্লো ওভার রেটের কারণে পয়েন্ট কাটা যায়, আবার খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফি-ও কাটা হয়।
এমন পরিস্থিতিতে, ড্র হওয়ার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৭ সালে ৪৪টি টেস্ট ম্যাচের মধ্যে ২১টি ড্র হয়েছিল, যা একটি রেকর্ড।
বর্তমানে ড্র-এর সংখ্যা ক্রমশ কমছে।
ইংল্যান্ড তাদের যুক্তিতে বলেছে, স্লো প্লে নিয়ে দর্শকদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই।
সম্ভবত, এই কারণে আইসিসি শাস্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
আলোচনায় আসা আরেকটি বিষয় হলো ‘স্টপ- ক্লক’-এর ব্যবহার।
সীমিত ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচে গত বছর থেকে এই নিয়ম চালু রয়েছে।
এর মাধ্যমে ফিল্ডিং দলগুলিকে ওভারের মধ্যে পজিশন নেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়।
যদি কোনো দল এই সময়ের বেশি নেয়, তাহলে তাদের জরিমানা করা হয়।
এই সিদ্ধান্তগুলো বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।
তবে, প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো যদি কার্যকর হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের ভবিষ্যৎ সুযোগ এবং বিশ্ব ক্রিকেটে তাদের অংশগ্রহণের ধরনে পরিবর্তন আনতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান