আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর সদস্যপদ রয়েছে এমন দেশগুলোর ওপর সম্প্রতি নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করার পর বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত এই আদালতের কর্মপরিধি, সদস্য দেশগুলোর ভূমিকা এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে নানা আলোচনা।
আইসিসি মূলত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আগ্রাসনের মতো গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য গঠিত হয়েছে।
এই আদালতের সদস্য রাষ্ট্রগুলো অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে এবং তাদের বিচারের জন্য সহযোগিতা করতে বাধ্য। ১৯৯৮ সালে রোম চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইসিসির যাত্রা শুরু হয় এবং ২০০২ সাল থেকে এটি কার্যকর হয়।
বর্তমানে ১২৫টি দেশ এই আদালতের সদস্য।
গত নভেম্বরে আইসিসি ২০২৩ সালে গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহু এবং তাঁর প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়।
এই ঘটনার জেরে হাঙ্গেরি, যেখানে নেতানিয়াহু সম্প্রতি সফর করেছেন, আইসিসি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
যদিও কোনো দেশ আইসিসি থেকে বের হতে চাইলে, সাধারণত এক বছর সময় লাগে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে।
আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিটি দেশের দায়িত্ব হলো আদালতের তদন্ত ও বিচারে সহযোগিতা করা।
এর মধ্যে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার, প্রমাণ সরবরাহ, সাক্ষী ও ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা এবং আদালতের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অন্যতম।
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে তাদের নিজস্ব আইনেও আইসিসির সংজ্ঞায়িত অপরাধগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে উৎসাহিত করা হয়, যাতে তারা এইসব অপরাধের বিচার করতে পারে।
তবে, বাস্তবে দেখা যায়, আইসিসির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও অনেক দেশ সব সময় আদালতের নির্দেশ মেনে চলে না।
যেমন, ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, আইসিসির সদস্য হওয়া সত্ত্বেও, সুদানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে গ্রেপ্তার করেনি, যদিও তাঁর বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যারা আইসিসির সদস্য নয়, তারা এই আদালতের কার্যক্রমের বিরোধিতা করে থাকে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আইসিসির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
এমনকি, ট্রাম্প এই আদালতকে ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ করার অভিযোগ করেছেন।
আইসিসির বর্তমান কার্যক্রমের মধ্যে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ/মিয়ানমার, বুরুন্ডি, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, আইভরি কোস্ট, লিবিয়া, মালি, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, সুদান, ভেনেজুয়েলা ও ইউক্রেন সম্পর্কিত তদন্ত উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে এই আদালতে চলমান ৩২টি মামলার মধ্যে কমপক্ষে ৬০টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আইসিসির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই আদালতের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি ন্যায়বিচারের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে সহায়তা করে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা