শিরোনাম: আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত: ক্ষমতাধরদের বিচারের পথে নতুন দিশা? ফিলিপাইনের ঘটনার পর আলোচনার ঝড়
মাননীয় পাঠক, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-এর কার্যক্রম নতুন করে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের (কাল্পনিক) গ্রেফতারি এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত দুতার্তেকে হেগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিচারের জন্য। এই ঘটনা শুধু একটি দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের বিচার নয়, বরং আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থা এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার প্রশ্নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
দুতার্তের গ্রেফতারি ছিলো অত্যন্ত নাটকীয়। তার বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে কয়েক হাজার মানুষ হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
এই গ্রেফতারি অনেকের কাছেই ছিলো অপ্রত্যাশিত, কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে আদালতের প্রতি উপহাস করেছেন এবং বিচারের প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছেন। তবে, তার এই গ্রেফতারি সম্ভবত একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
ভবিষ্যতে অন্যান্য প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের বিচারের পথও খুলে যেতে পারে, যাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাদের বিরুদ্ধেও আইসিসি’র গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।
তবে, তাদের গ্রেফতার করা সহজ হবে না, কারণ এক্ষেত্রে অনেক রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক জটিলতা রয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সম্প্রতি হাঙ্গেরি সফর করেন। অথচ, হাঙ্গেরি জাতিসংঘের রোম সনদের সদস্য এবং আইসিসি’র গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে তারা বাধ্য।
তবে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের নেতানিয়াহুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো এবং আদালত ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে বেশ সমালোচিত হয়েছে।
অন্যদিকে, পুতিনের বিরুদ্ধে ইউক্রেন যুদ্ধ সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। যদিও রাশিয়া আইসিসি’র সদস্য নয়, তবুও পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।
তবে, তাকে বিচারের আওতায় আনা কঠিন, কারণ তিনি এখনো ক্ষমতায় আছেন এবং তার সুরক্ষার জন্য অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমনকি তিনি যদি দেশ ছাড়েনও, অনেক দেশ তাকে গ্রেফতার করতে দ্বিধা বোধ করবে।
আইসিসি’র কার্যক্রম শুধু রাজনৈতিক নেতাদের বিচারেই সীমাবদ্ধ নয়। আন্তর্জাতিক এই আদালত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো গুরুতর অভিযোগগুলোর তদন্ত ও বিচারের জন্য কাজ করে।
বর্তমানে, আইসিসি’র সদস্য সংখ্যা ১২৫। তবে, আদালতের নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। তাই, গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করতে তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতা নিতে হয়।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
বর্তমানে তিনি সুদানে কারাবন্দী রয়েছেন।
তবে, আইসিসি’র কার্যকারিতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। আদালতের বিচার প্রক্রিয়া ধীর গতিতে চলে এবং অভিযুক্তদের মধ্যে অনেকের সাজা হয় না।
বিশেষ করে আফ্রিকার দেশগুলোতে আইসিসি’র কার্যক্রম বেশি দেখা যায়, যা কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, দুতার্তের গ্রেফতারি আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি হতে পারে।
তবে, এই প্রক্রিয়াটি সহজ হবে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
দুতার্তের গ্রেফতারের ঘটনা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে একটি নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এটি ভবিষ্যতে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের বিচারের ক্ষেত্রে আরও বেশি উৎসাহ যোগাবে। তবে, এই পথে অনেক বাধা রয়েছে।
তাই, আইসিসি’কে তার কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হলে আরও অনেক বেশি সক্রিয় হতে হবে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন