মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক কর্তৃপক্ষের (ICE) গ্রেফতারের ধরনে অঙ্গরাজ্য ভেদে ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি, সিএনএন-এর একটি বিশ্লেষণে ধরা পড়েছে, যেসব রাজ্যে রিপাবলিকান পার্টি জয়ী হয়েছে (সাধারণত ‘লাল রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত), সেখানে ICE সাধারণত কারাগার বা জেলখানা থেকে অভিবাসীদের গ্রেফতার করে।
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটদের জয়ী হওয়া রাজ্যগুলোতে (সাধারণত ‘নীল রাজ্য’ হিসেবে পরিচিত) ICE-এর সদস্যরা বেশি সক্রিয় হন এবং এদের গ্রেফতার অভিযান চলে কর্মক্ষেত্র, রাস্তাঘাট ও জনসমাগমে। এই ভিন্নতা নিয়ে অভিবাসী অধিকারকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
সিএনএন-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, লাল রাজ্যগুলিতে ICE-এর গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অপরাধের রেকর্ড থাকার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে নীল রাজ্যগুলিতে, গ্রেফতার হওয়া অনেক অভিবাসীর কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই।
উদাহরণস্বরূপ, ম্যাসাচুসেটস-এ ICE কর্তৃক গ্রেফতার হওয়া ৯৪ শতাংশ অভিবাসীকে জনবহুল এলাকা থেকে ধরা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৮ শতাংশের কোনো অপরাধমূলক ইতিহাস ছিল না।
এই বিভাজন মূলত অঙ্গরাজ্যগুলির ভিন্ন নীতির কারণে হয়েছে। নীল রাজ্যগুলিতে “অভয় নীতি” (Sanctuary Policies) প্রচলিত আছে, যা স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ICE-এর সহযোগিতা সীমিত করে।
এর ফলে, ICE কর্মকর্তাদের কমিউনিটিতে অভিযান চালাতে হয়। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, নীল রাজ্যগুলির এই নীতি তাদের কাজ কঠিন করে তুলেছে, তবে অভিবাসন অধিকারকর্মীরা মনে করেন, এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভীতি সৃষ্টি করা।
ম্যাসাচুসেটস-এর ঘটনার দিকে তাকালে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এখানে রাজ্য সরকারের একটি আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে, যা স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ICE-এর অনুরোধে সহযোগিতা করতে বাধা দেয়।
বোস্টন সহ বেশ কয়েকটি শহরে এমন নীতি রয়েছে, যা ICE-এর সঙ্গে সমন্বয়কে আরও সীমিত করে। যদিও ICE-এর কর্মকর্তারা বলছেন, এই ধরনের নীতি তাদের কাজকে কঠিন করে তোলে, তবুও কমিউনিটিতে অভিযান চালানোর কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করেন, এর মাধ্যমে অভিবাসীদের মধ্যে ভীতি তৈরি করা হয়।
এই ভিন্ন ধরনের গ্রেফতার অভিযানগুলি অভিবাসী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাসাচুসেটস-এর চেলসি এবং এভারেটের মতো শহরতলিতে বসবাসকারী অনেক অভিবাসী, ICE-এর গ্রেফতার আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
এমনকি, তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠানো এবং ডাক্তারের কাছে যাওয়াও কমে গেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কারণ মানুষজন কেনাকাটা করতে বাইরে বের হচ্ছেন না।
এরকম একটি ঘটনার শিকার হয়েছেন জিওভানি এসাও দে লা ক্রুজ কাটালান। তিনি ২০২১ সালে গুয়াতেমালা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
সম্প্রতি, তিনি হাই স্কুল শেষ করার কয়েকদিন পরেই, তার বাড়ির সামনে ICE কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেফতার হন। তার কোনো অপরাধের রেকর্ড ছিল না।
জিওভানি জানান, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নতুন জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখতেন, কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার পর তার সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, তবে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
আইন ও নীতির এই ভিন্নতার কারণে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অভিবাসন বিষয়ক নীতিগুলি বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী মানুষের জীবনে ভিন্ন প্রভাব ফেলছে।
তথ্য সূত্র: CNN