বরফের বালতি চ্যালেঞ্জ: মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য নতুন রূপে!

বরফের বালতি চ্যালেঞ্জ: পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

এক দশক আগে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ‘আইস বাকেট চ্যালেঞ্জ’ (Ice Bucket Challenge) আবারও ফিরে এসেছে। তবে এবার ভিন্ন উদ্দেশ্যে—মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা তৈরিতে।

২০১৬ সালে অ্যামাইট্রোফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস) বা ‘লু গেরিগ’স ডিজিজ’ (Lou Gehrig’s disease) সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এই চ্যালেঞ্জের সূচনা হয়েছিল।

এই রোগের কারণে মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষ ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা পরবর্তীতে মাংসপেশির নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হ্রাস করে এবং ধীরে ধীরে কথা বলা, নড়াচড়া করা ও শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

২০১৪ সালে ভাইরাল হওয়া এই চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে মাত্র ছয় সপ্তাহে প্রায় ১১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (সে সময়ের বিনিময় হার অনুযায়ী যা প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি) সংগ্রহ করা হয়েছিল।

এই অর্থ মূলত এএলএস রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করা হয়।

বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো এই চ্যালেঞ্জ এএলএস রোগের গতিপথ পরিবর্তনে সাহায্য করেছে, যা রোগ-সংশ্লিষ্ট জিন এবং চিকিৎসার আবিষ্কারের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করতে সহায়তা করেছে।

এবার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা বাড়াতে নতুন করে শুরু হয়েছে ‘স্পিক ইউর মাইন্ড চ্যালেঞ্জ’ (#SpeakYourMIND Challenge)।

সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়েড জেফারসন, বন্ধুদের আত্মহত্যার ঘটনা থেকে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এই চ্যালেঞ্জের সূচনা করেন।

এই চ্যালেঞ্জের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ‘অ্যাকটিভ মাইন্ডস’ (Active Minds) নামক একটি সংস্থায় দান করা হচ্ছে, যা তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণা পরিবর্তনে কাজ করে।

এই চ্যালেঞ্জে প্রাক্তন আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড় পেটন ম্যানিং এবং জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব জেনা বুশ হেগারের মতো খ্যাতিমান ব্যক্তিরাও সমর্থন জুগিয়েছেন।

তবে, অনেকের মনে আশঙ্কা ছিল, নতুন এই চ্যালেঞ্জের কারণে এএলএস বিষয়ক সচেতনতা কমে যেতে পারে।

পরবর্তীতে এএলএস অ্যাসোসিয়েশন (ALSA) এবং ‘অ্যাকটিভ মাইন্ডস’ একত্রিত হয়ে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য—নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

কারণ এএলএস রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা প্রায়শই আলোচনা করা হয় না।

এএলএস একটি গুরুতর রোগ।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ এই রোগে আক্রান্ত এবং আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই রোগ নির্ণয়ের ২ থেকে ৫ বছরের মধ্যে মারা যান।

গবেষণায় দেখা গেছে, এএলএস রোগীদের শারীরিক দুর্বলতা বাড়ার সাথে সাথে তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রায় ৬৪ শতাংশ এএলএস রোগী হতাশায় ভোগেন এবং ৮৮ শতাংশ উদ্বেগ অনুভব করেন।

চিকিৎসকরা বলছেন, এএলএস রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি প্রয়োজন।

বর্তমানে এএলএস রোগীদের চিকিৎসার জন্য নতুন প্রযুক্তি তৈরি হচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ‘কিউআলসোডি’ (Qalsody) নামক একটি নতুন জিন-ভিত্তিক থেরাপি এএলএস রোগের বিরল রূপের অগ্রগতিকে ধীর করে এবং রোগীদের শারীরিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করে।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক এই নতুন চ্যালেঞ্জ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

এই ধরনের উদ্যোগ দেশের মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

আমাদের দেশেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা ও সহায়তার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *