যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কেন্দ্রে বন্দী দুই ছাত্র: মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে (আটক কেন্দ্র) বন্দী থাকা দুই শিক্ষার্থীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে একজন হলেন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল এবং অন্যজন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বাদর খান সুরি। জানা গেছে, এই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর চিত্র ফুটে উঠেছে।
খলিলকে লুইসিয়ানার একটি আটক কেন্দ্রে এবং সুরিকে টেক্সাসের একটি কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। তাঁদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই কেন্দ্রগুলোতে বন্দীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই, এমনকি আইনজীবীদের সঙ্গেও সহজে দেখা করতে দেওয়া হয় না।
অভিযোগ উঠেছে, কেন্দ্রগুলোতে বন্দীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং তাঁদের খাবার ও স্বাস্থ্যবিধির সুযোগও সীমিত। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে আহত অবস্থায় শিকল পরানো, নির্জন কারাবাসে দূষিত দুধ সরবরাহ এবং বাথরুমের নোংরা পরিবেশ বজায় রাখা।
মাহমুদ খলিলকে আটকের পর তাঁর স্ত্রী নূর আব্দুল্লাহ বলেছেন, “মনে হচ্ছিল মাহমুদকে আমাদের ঘর থেকে অপহরণ করা হয়েছে। আমি জানতেও পারছিলাম না সে কোথায় আছে বা তার সঙ্গে কী হচ্ছে।”
আরেক বন্দী বাদর খান সুরির আইনজীবী হাসান আহমেদ জানিয়েছেন, তাঁর সঙ্গেও নিয়মিতভাবে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। রমজান মাসে সুরিকে ভোর রাতের খাবার দেওয়া হয়নি এবং তাঁকে দেওয়া খাবারও ছিল নিম্নমানের।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত এই ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে দীর্ঘদিন ধরেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এখানে বন্দীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করা হয়। তাঁদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় না। এমনকি তাঁদের বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।
জানা গেছে, এই কেন্দ্রগুলো এমন সব স্থানে অবস্থিত, যেখানে সহজে বাইরের মানুষের যাওয়া বা যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। লুইসিয়ানার একটি আটক কেন্দ্রে ২০১৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে চারজন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন ‘রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্টনি এনরিকেজ বলেছেন, “লুইসিয়ানার ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে বন্দীদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করা হয়, তা অত্যাচারের শামিল।”
এদিকে, টেক্সাসের একটি ডিটেনশন সেন্টারেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। সেখানকার বন্দীদের চিকিৎসা অবহেলা, দীর্ঘ সময় নির্জন কারাবাসে রাখা এবং যৌন নির্যাতনের মতো অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে মাহমুদ খলিলের মামলাটি নিউ জার্সিতে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তিনি এখনো লুইসিয়ানাতেই বন্দি আছেন। অন্যদিকে, বাদর খান সুরির মামলা এখনো বিচারাধীন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই দুই শিক্ষার্থীর আটক এবং ডিটেনশন সেন্টারগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা অবিলম্বে বন্দীদের মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন