যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কেন্দ্রে অভিবাসীদের দুর্বিষহ জীবন, নীতির চরম লঙ্ঘন।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) কর্তৃপক্ষের হেফাজতে থাকা অভিবাসীদের দুর্দশা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সিএনএন-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানা গেছে, এইসব কেন্দ্রে অভিবাসীদেরকে অত্যন্ত খারাপ পরিবেশে রাখা হচ্ছে এবং কর্তৃপক্ষের নিজস্ব নীতিও মানা হচ্ছে না।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিবাসীদের ‘হোল্ড রুম’-এ (সাময়িক আটক কেন্দ্র) ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকে রাখার নিয়ম থাকলেও, বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রে দিনের পর দিন তাদের সেখানে কাটাতে হচ্ছে। এইসব কক্ষে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষ থাকায় সেখানে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
পর্যাপ্ত খাবার, জল এবং স্বাস্থ্যবিধির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক বন্দী। এমনকি, যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে সেখানে বন্দীদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অভিবাসন প্রক্রিয়া জোরদার করার কারণে এই সমস্যা আরও বেড়েছে। ২০১৬ সালের আগের বছরগুলোতে যেখানে মাত্র ৪ শতাংশ বন্দীকে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ‘হোল্ড রুম’-এ থাকতে হয়েছে, সেখানে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম ৬ মাসে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৮ শতাংশে।
কোনো কোনো কেন্দ্রে, বন্দীদের সেখানে ২-৩ দিন পর্যন্ত কাটাতে হয়েছে। এমনকি, এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে আটকে থাকার ঘটনাও ঘটেছে।
মায়ামির একটি ‘হোল্ড রুমে’ ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দী থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানে মেঝেতে ঘুমোতে বাধ্য হওয়া, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস না থাকা এবং অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।
সেখানকার এক বন্দী সিএনএন-কে জানিয়েছেন, গরম এবং এয়ার কন্ডিশনার (AC) কাজ না করার কারণে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেক সময় খাবার এবং জলের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আকুতি জানাতে হয়েছে তাদের।
আরেকটি ঘটনায় জানা যায়, একজন অভিবাসী, যিনি ‘হোল্ড রুমে’ তিন দিনের বেশি সময় কাটিয়েছিলেন, পরে আইসিই হেফাজতে মারা যান। এছাড়া, কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষাতেও ধরা পড়েছে, এইসব কক্ষে বন্দীদের বেশি সময় ধরে রাখা হচ্ছে এবং তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
তাদের কম্বল বা বালিশের ব্যবস্থা ছিল না এবং খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হয়নি।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই কেন্দ্রগুলোতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদের মক্কেলদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত কক্ষেও বন্দীদের রাখতে হয়েছে। সেখানে কার্টনের বাক্সকে তারা বিছানা হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS)-এর একজন মুখপাত্র অবশ্য দাবি করেছেন, আইসিই তাদের ডিটেনশন স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ‘হোল্ড রুম’ পরিচালনা করে এবং সেখানকার পরিবেশ কোনোভাবেই খারাপ নয়। তিনি জানান, বন্দীদের পর্যাপ্ত খাবার, চিকিৎসা, গোসল এবং তাদের পরিবার ও আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয়।
মুখপাত্র আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে আইসিই-এর সুযোগ-সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ কারাগারের চেয়েও উন্নত।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এইসব কেন্দ্রের পরিস্থিতি অভিবাসীদের জন্য ভীতিকর। অনেক অভিবাসী, যাদের কোনো অপরাধের রেকর্ড নেই, তাদেরও এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অভিবাসন প্রক্রিয়া কঠোর হওয়ায়, ডিটেনশন সেন্টারগুলোতে বন্দীর সংখ্যা বেড়েছে, যা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
তথ্যসূত্র: সিএনএন