আতঙ্কে লস অ্যাঞ্জেলেস: আইস হানায় কেমন হল?

লস এঞ্জেলেসের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে অভিবাসন বিভাগের আকস্মিক অভিযানে নেমে আসায় সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা শহরটিকে এক প্রকার ‘ভূতুড়ে শহরে’ পরিণত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই শহরে অভিবাসন বিষয়ক কর্মকর্তাদের ধরপাকড়ের ফলে বিশেষ করে ল্যাটিনো-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নেমে এসেছে চরম দুর্গতি।

লস এঞ্জেলেসের ফ্যাশন জেলার একটি পরিচিত স্থান হলো স্যান্টে এলি। সাধারণত, এখানে প্রচুর মানুষের আনাগোনা থাকে। ক্রেতারা এই এলাকার দোকানগুলোতে ভিড় করে কেনাকাটা করেন। কিন্তু বর্তমানে সেখানকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত মাসের শেষ দিকে গিয়ে দেখা যায়, অনেক দোকানের শাটার নামানো এবং তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে, এমনকি দিনের আলোতেও। মানুষের কোলাহল বা কেনাকাটার ব্যস্ততা নেই, পথঘাট প্রায় জনশূন্য।

লস এঞ্জেলেসের এই পরিস্থিতি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির প্রত্যক্ষ ফল। সেখানকার ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে তারা কোভিড মহামারীর সময়কালের চেয়েও খারাপ সময় পার করছেন। ফ্যাশন জেলার একজন ব্যবসায়ী নেতা এন্থনি রদ্রিগেজ জানান, এখানকার ব্যবসায়ীরা, কর্মচারী এবং ক্রেতারা সবাই আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযানে আসার গুজব শোনা গেলেও সেখানকার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রদ্রিগেজ আরও বলেন, “ছোট্ট একটি গুঞ্জনও পুরো এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে যথেষ্ট।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসের প্রথম দশ দিনে লস এঞ্জেলেস এলাকা থেকে প্রায় ৭২২ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশি, অর্থাৎ ৪১৭ জনকে অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া, আটককৃতদের মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ ২২১ জন ছিলেন বিভিন্ন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত। যেখানে গত বছর একই সময়ে আটককৃতদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি ছিল অপরাধী।

এই ধরপাকড়ের কারণে ব্যবসায়ীরা গ্রীষ্মের কেনাকাটার মৌসুমে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। স্যান্টে এলি এবং ফ্যাশন জেলার মতো এলাকাগুলোতে মূলত ল্যাটিনো সম্প্রদায়ের মানুষের বসবাস। সেখানকার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকেই এই ধরপাকড়ের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। স্থানীয় এক জুয়েলারি বিক্রেতা ভিলমা মেদিনা জানান, আতঙ্কের কারণে ব্যবসার এই সময়েও বিক্রি প্রায় ৯০ শতাংশ কমে গেছে।

অন্যদিকে, অনেক অভিবাসী এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন, কারণ তাদের জীবন ধারণের জন্য কাজ করা অপরিহার্য। ৬৫ বছর বয়সী একজন মেক্সিকান অভিবাসী জানান, তিনি ৪৩ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন এবং এখনো কাগজপত্র ছাড়াই সেখানে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাজ করতে যেতে হয়, কারণ আমাদের বাড়ি ভাড়াসহ অন্যান্য বিল পরিশোধ করতে হবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর এলেনি কোউনালাকিস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, এই রাজ্যের কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীরা স্থানীয়, রাজ্য এবং ফেডারেল ট্যাক্সে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অবদান রাখেন। যদি রাজ্যের প্রায় ২৩ লাখ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হয়, তবে রাজ্যের জিডিপি ২৮০ বিলিয়ন ডলার কমে যাবে, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি বিশাল ক্ষতি।

ফ্যাশন ডিস্ট্রিক্টের ব্যবসায়ীদের জন্য সাহায্য চেয়েছেন রদ্রিগেজ। তিনি মনে করেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে, তবে স্যান্টে এলি অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াবে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *