যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে অস্থিরতা, শ্রমিক সংকট ও ব্যবসায়িক ক্ষতির শঙ্কা।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক নীতিমালায় ঘন ঘন পরিবর্তন আসায় শ্রমিক সংকট তৈরি হয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিকে নতুন করে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। সম্প্রতি অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) বিভাগের আকস্মিক ধরপাকড়ের কারণে কৃষি, হোটেল ও রেস্তোরাঁ শিল্পের কর্মীরা কাজ ছাড়তে শুরু করেছেন। এতে করে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্মী সংকটে পড়েছে, যা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে অভিবাসন বিরোধী কঠোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ICE কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের সংখ্যা অনেক বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে কর্মীরা আতঙ্কে ছিলেন। অনেক খামারি ও ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তাদের শ্রমিকরা কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। নিউ মেক্সিকোর একটি দুগ্ধ খামারে এক সময় ৫৫ জন কর্মী কাজ করতেন, কিন্তু ICE-এর অভিযানের পর সেখানে এখন মাত্র ২০ জন কাজ করছেন। শ্রমিক সংকটের কারণে খামারের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি জাপানি রেস্তোরাঁর শেফ জানিয়েছেন, তার অনেক হিস্পানিক শ্রমিক, যারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন বা করেন না, তারা কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, তাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, তাদের গায়ের রঙের কারণে হয়তো ICE তাদের ওপর নজর রাখছে। ওয়াশিংটন রাজ্যের ফল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলোতেও একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। অভিবাসন অভিযানের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় অনেক শ্রমিক কাজে আসছেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যবসার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, অভিবাসন নীতির এই পরিবর্তন ব্যবসায়ীদের জন্য এক বিরাট উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর ফলে একদিকে যেমন শ্রমিক পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে, তেমনি ব্যবসার পরিকল্পনা করাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেকেই বলছেন, শ্রমিকদের মধ্যে ভীতি তৈরি হওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে, যা ব্যবসার খরচও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মোট কর্মীর মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৯ শতাংশ। তবে খাদ্য প্রস্তুত ও পরিবেশন খাতে এই সংখ্যা প্রায় ২৪ শতাংশ এবং কৃষি, মৎস্য ও বনজ সম্পদ খাতে ৩৮ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অভিবাসী শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীলতা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে এই অনিশ্চয়তা দেশটির অর্থনীতিকে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে তাদের পক্ষে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অভিবাসন নীতি ও অর্থনৈতিক নীতির মধ্যে সমন্বয় না থাকলে তা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস