আতঙ্কের রাত: কোবার্গারের রায়ে স্তব্ধ নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবার!

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে আগামী সপ্তাহে ইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত ব্রায়ান কোহবার্গারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এই ঘটনার প্রায় তিন বছর পর, বিচারক তাঁর এই রায় ঘোষণা করবেন।

নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা এই রায়ের মাধ্যমে তাঁদের প্রিয়জন হারানোর গভীর শোক আর কষ্টের কথা প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন।

২০২২ সালের ১৩ই নভেম্বর, ভোররাতে, কোহবার্গার নামের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী, ইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চার শিক্ষার্থী—জানা কার্নোডল, ম্যাডিসন মোগেন, ইথান চ্যাপিন এবং কেইলি গোনকালভেস-এর উপর হামলা চালান।

জানা গেছে, কোহবার্গার তাঁদের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। তিনি একটি ছুরি দিয়ে তাঁদেরকে হত্যা করেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছোট শহর মস্কোতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে এবং সেখানকার মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে দেয়।

তদন্তকারীরা প্রথমে হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।

কিন্তু কিছু সূত্র তাঁদের কাজে আসে।

নিহতদের একজনের কাছাকাছি পাওয়া একটি ছুরির খাপে পুরুষের ডিএনএ পাওয়া যায়। এছাড়াও, ঘটনার সময় সাদা রঙের একটি হাইundai এলানট্রা গাড়িকে ঘটনাস্থলের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়, যা তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

পরে, জেনেটিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোহবার্গারকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তাঁর মোবাইল ফোনের ডেটা পরীক্ষা করে ঘটনার রাতে তাঁর গতিবিধির প্রমাণ পাওয়া যায়।

তদন্তে আরও জানা যায়, ঘটনার কয়েক মাস আগে কোহবার্গার একটি মিলিটারি-স্টাইলের ছুরি এবং ছুরির খাপ কিনেছিলেন।

ঘটনার ছয় সপ্তাহ পর পেনসিলভানিয়া থেকে কোহবার্গারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রথমে তিনি দোষ স্বীকার করতে রাজি হননি।

পরে আদালতের নির্দেশে তাঁর হয়েই ‘দোষী নন’–এর রায় দেওয়া হয়।

এই মামলার তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

অনলাইনে অনেকেই তাঁদের নিজস্ব তত্ত্ব ও প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। এমনকি, কিছু ব্যক্তি ভুক্তভোগীদের পরিচিতজন এবং একই এলাকার বাসিন্দাদের দিকেও আঙুল তোলেন, যা ভুয়া তথ্যের বিস্তার ঘটায়।

মামলার শুনানির সময়, সরকারি কৌঁসুলি বিল থম্পসন জানান, কোহবার্গার দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আবেদন করা হবে।

তবে, কোহবার্গারের আইনজীবী অ্যান টেইলর ডিএনএ প্রমাণ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তিনি ‘অন্যান্য সন্দেহভাজন’দের তত্ত্ব আদালতে পেশ করার চেষ্টা করেন, যদিও তাতে তেমন কাজ হয়নি।

তবে, কোহবার্গারের বিরুদ্ধে আনা প্রমাণগুলো বেশ শক্তিশালী ছিল।

অবশেষে, অভিযুক্তের আইনজীবীরা মৃত্যুদণ্ড এড়ানোর জন্য একটি আপস প্রস্তাব দেন।

এই প্রস্তাবে কোহবার্গার তাঁর দোষ স্বীকার করেন।

এর বিনিময়ে সরকারি কৌঁসুলিরা তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আবেদন প্রত্যাহার করে নেন।

সেই সঙ্গে, আদালত কোহবার্গারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন, যেখানে প্যারোলের কোনো সুযোগ থাকবে না।

এছাড়া, তিনি একটি চুরির দায়ে আরও ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করবেন।

কোহবার্গার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অধিকারও ত্যাগ করেছেন।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *