আইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্রায়ান কোহবার্জারের বিরুদ্ধে মামলার শুনানির সময় ভুক্তভোগীদের ঘটনার আগের রাতের বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছে। বিচারক স্টিভেন হিপলারের দেওয়া এক নতুন আদেশে ঘটনার বিস্তারিত জানা যায়, যেখানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া চার শিক্ষার্থীর শেষ কয়েক ঘণ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২২ সালের ১৩ই নভেম্বর, গভীর রাতে ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ডের সময়, নিহতদের সঙ্গে ছিলেন তাঁদের দুই রুমমেট। তাঁদের জবানবন্দি এবং টেক্সট মেসেজ থেকেই জানা যায় ঘটনার আগের রাতের কিছু কথা। জানা যায়, সেদিন রাতে নিহত চার তরুণী ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগেও বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন।
আদালতের নথি অনুযায়ী, ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে, চারজন তাঁদের রুমের ভেতরে বসে কিছুক্ষণ গল্প করেন এবং এর কিছুক্ষণ পরেই তাঁরা ঘুমাতে যান। সেই সময় তাঁদের আরেক রুমমেট, জানা ও তাঁর প্রেমিক ইথান চ্যাপিন বাইরে ছিলেন। পরে তাঁরা সবাই মিলে বাইরে কোনো ফুড ট্রাকে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা বাইরে না গিয়ে ঘুমিয়ে যান।
ওই রাতে, রুমমেটদের একজন, ডিএম, ভোর ৪টার দিকে বাথরুম থেকে “কিছু অদ্ভুত শব্দ” শুনতে পান। তিনি যখন শব্দ শুনে এগিয়ে যান, তখন দেখেন “কালো পোশাক পরা এবং স্কি মাস্ক পরিহিত” একজন তাঁর রুমের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এরপর ডিএম তাঁর অন্য রুমমেটদের টেক্সট করেন, কিন্তু শুধুমাত্র বিএফ সাড়া দেন।
আতঙ্কিত ডিএম, বিএফের সাথে কথা বলার পর, ভোর ৪টা ২৬ মিনিটে বিএফের রুমে যান। সেখানে যাওয়ার পথে তিনি জানা’র মৃতদেহ দেখতে পান। জানা তাঁর রুমের মেঝেতে, মাথার দিক দেয়ালের দিকে এবং পায়ের দিকটা দরজার দিকে ছিল। ডিএম প্রথমে ভেবেছিলেন জানা হয়তো মাতাল হয়ে আছেন। এরপর দুই তরুণী বিএফের রুমে আশ্রয় নেন এবং ঘটনার আট ঘণ্টা পর পর্যন্ত তাঁরা তাঁদের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।
এই মামলার শুনানিতে, আইনজীবীরা প্রাথমিকভাবে জীবিত দুই রুমমেটের টেক্সট বার্তা, তাঁদের কথোপকথন এবং জরুরি অবস্থার সময় করা ৯১১ নম্বরে ফোন করার প্রমাণ উপস্থাপন করার অনুমতি চেয়েছিলেন। বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। তবে, টেক্সট, জবানবন্দি এবং ৯১১ কলের কিছু অংশকে ‘গুজব’ হিসেবে রায় দিয়ে, তা মামলার প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছেন।
অভিযুক্ত ব্রায়ান কোহবার্জারের বিরুদ্ধে, ২১ বছর বয়সী ম্যাগি, ২১ বছর বয়সী গনকালভেস, ২০ বছর বয়সী জানা এবং ২০ বছর বয়সী চ্যাপিনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। নিহত চারজনই থাকতেন একটি বাড়িতে, যেখানে ডিএম ও বিএফও থাকতেন।
আদালতের নথিতে বলা হয়েছে, কোহবার্জারের ডিএনএ একটি ছুরির খাপে পাওয়া গেছে। এছাড়াও, তাঁর মোবাইল ফোনের লোকেশন এবং ঘটনার কাছাকাছি সময়ে তাঁর গাড়ির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে, পুলিশ তাঁকে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়।
কোহবার্জারের আইনজীবী, অ্যান টেইলর, তাঁর মক্কেলের একটি স্বপক্ষ সমর্থন করে বলেন, ঘটনার রাতে কোহবার্জার একাই গাড়ি চালাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
আসামীপক্ষের আবেদনের কারণে, মামলার স্থান পরিবর্তন করে, আগামী ১১ই আগস্টে বোইস কাউন্টিতে এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে কোহবার্জারের মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
আদালতে নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে কোহবার্জার জানিয়েছেন, বিচারের মাধ্যমে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।
তথ্য সূত্র: পিপল