আইডাহোতে টিকাদান বাধ্যতামূলক বন্ধ! দেশের জন্য মডেল হতে চায়?

**আইডাহোতে টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করার উপর নিষেধাজ্ঞা: যুক্তরাষ্ট্রের অন্য রাজ্যগুলোতে এর প্রভাব বিস্তারের সম্ভবনা**

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আইডাহোতে (Idaho) সম্প্রতি একটি আইন পাস হয়েছে, যা নাগরিকদের টিকা (vaccine) নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দিয়েছে।

এই আইনের ফলে সরকারি দপ্তর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল এবং ডে-কেয়ার সেন্টারগুলোতে কর্মীদের বা ছাত্র-ছাত্রীদের টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা যাবে না। এটিকে “মেডিকেল ফ্রিডম অ্যাক্ট” বা চিকিৎসা স্বাধীনতা আইন হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।

এই আইনের মূল উদ্যোক্তা হলেন লেসলি ম্যানুকিয়ান (Leslie Manookian)। তাঁর মতে, এই আইন ব্যক্তি স্বাধীনতার এক গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।

আইনটি এমন সময়ে আসলো যখন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কিছু নিয়ম নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে, বিদ্যালয়ে শিশুদের টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা উচিত কিনা, সেই বিষয়ে অনেক অভিভাবকের মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে।

আইডাহোর নতুন এই আইন বিদ্যমান জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণার পরিপন্থী। কারণ, আধুনিক জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সমাজের প্রতিটি মানুষের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলার ওপর জোর দেওয়া হয়।

যেমন, হাম রোগের বিস্তার রোধ করতে বিদ্যালয়ে শিশুদের টিকা দেওয়া আবশ্যক। কিন্তু নতুন আইনে এই ধরনের বাধ্যবাধকতাগুলো অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এই আইনের ফলে আইডাহো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্য থেকে অনেকটাই আলাদা হয়ে গেছে। যদিও আইডাহোতে টিকা বিষয়ক নিয়মকানুন আগে থেকেই তুলনামূলকভাবে শিথিল ছিল, তারপরও নতুন এই আইন দেশটির অন্যান্য রাজ্যেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এমনকী, যারা রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত, সেই সাউথ ক্যারোলিনার মতো রাজ্যেও হামের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর, টিকাবিহীন শিশুদের কোয়ারেন্টাইনে (Quarantine) রাখতে হয়েছে।

আইডাহোর এই আইনটি মূলত এমন কিছু মানুষের সমর্থন লাভ করেছে, যারা মনে করেন টিকা (vaccine) রোগ প্রতিরোধের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর।

তাঁদের মতে, টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো কেবল মুনাফার উদ্দেশ্যে কাজ করে। এই ধারণার সঙ্গে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর মতের মিল নেই।

আইডাহোর এই পদক্ষেপের ফলে লুইজিয়ানার মতো রাজ্যেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সেখানকার স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মীরা মনে করেন, টিকাকরণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

অন্যদিকে, এই আইনের সমর্থকরা চান, এটি যেন সারা দেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তাঁদের মতে, প্রতিটি মানুষের নিজের চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে এবং এই অধিকারকে আইনে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।

লেসলি ম্যানুকিয়ান মনে করেন, টিকা বিষয়ক গবেষণা পর্যাপ্ত নয়।

তিনি তাঁর এই ধারণা আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান। তিনি বিভিন্ন সেমিনারে (seminar) বক্তৃতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেখানে এই আইনের পক্ষে প্রচার চালানো হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা রোগ প্রতিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC)-এর মতে, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য।

এই পরিস্থিতিতে আইডাহোর এই আইন জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিগুলোর জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *