জার্মান পিয়ানোবাদক ইগর লেভিট, যিনি সঙ্গীতের জগতে এক পরিচিত নাম, সম্প্রতি লন্ডনের কুইন এলিজাবেথ হলে এরিক সাটির “ভেক্সেশনস” নামক একটি পিয়ানো সুর একটানা ১৬ ঘণ্টা ধরে পরিবেশন করেছেন।
মূল সুরটি একবার বাজাতে সাধারণত ১ থেকে ২ মিনিটের মতো সময় লাগে, তবে লেভিট এই সুরটি ৮৪০ বার বাজিয়েছেন, যা ছিল এক অসাধারণ ধৈর্য্যের পরীক্ষা।
এই দীর্ঘ এবং কঠিন সঙ্গীতানুষ্ঠানটি শিল্পী মারিনা আব্রামোভিচের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজিত হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডনে যখন এই কনসার্ট শুরু হয়, তখন সম্ভবত অনেকেই ভেবেছিলেন, এত দীর্ঘ সময় ধরে একই সুর বাজানো কতটা কঠিন হতে পারে!
তবে, লেভিট মঞ্চে এসে হাসিমুখে তাঁর বাদ্যযন্ত্রের স্বরলিপি সাজিয়ে নেন এবং বাজানো শুরু করেন।
এই অনুষ্ঠানে আসা প্রায় দেড়শ’ জন দর্শক টিকিট কেটেছিলেন পুরো সময়ের জন্য।
টিকিট বিক্রির হার ছিল বেশ উৎসাহব্যঞ্জক।
“ভেক্সেশনস” সুরটি ১৮৯৩ সালে লেখার পর থেকেই শিল্পীদের মধ্যে এর বিশেষত্ব তৈরি হয়েছে।
সুরটি এতটাই সরল যে, একে বহুবার বাজালে শ্রোতাদের মধ্যে এক ধরনের সম্মোহন তৈরি হয়।
এর আগে ১৯৬৩ সালে জন কেজ-এর তত্ত্বাবধানে এই সুরটি ১৯ ঘণ্টা ধরে বাজানো হয়েছিল।
সেই সময়ে এটিকে “সঙ্গীতের ইতিহাস” হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল।
কোভিড-১৯ লকডাউনের সময় লেভিট তাঁর বার্লিনের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এই সুরটি ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাজিয়েছিলেন।
এই কনসার্টে আসা দর্শকদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন যারা সঙ্গীতের থেকেও এই পরিবেশনার অভিজ্ঞতা নিতে এসেছিলেন।
তাঁরা জানান, এই সুরের পুনরাবৃত্তি তাঁদের মধ্যে এক ধরনের সম্মোহন তৈরি করে, যা তাঁদের মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
অনুষ্ঠানে আসা এক দর্শক জানান, তিনি এর আগে ক্রিশ্চিয়ান মারক্লে’র একটি ফিল্ম ইন্সটলেশনে পাঁচ ঘণ্টা সময় কাটিয়েছিলেন, তাই এই দীর্ঘ কনসার্টে শেষ পর্যন্ত থাকার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
অন্য একজন দর্শক, যিনি এই সুরের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন, জানান, ১৯৮৩ সালে তিনি এই সুরটি ১১ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট ধরে বাজিয়েছিলেন।
লেভিটের এই দীর্ঘ যাত্রায় তাঁর সহায়ক ছিলেন কয়েকজন সহযোগী, যাঁরা তাঁর ক্লান্তি দূর করতে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত ছিলেন।
এমনকি বাথরুমের জন্য ছিল বিশেষ ব্যবস্থা।
এই ধরনের দীর্ঘ এবং একঘেয়ে পরিবেশনা শিল্পীর শারীরিক এবং মানসিক ধৈর্যের এক চরম পরীক্ষা।
কনসার্টে আসা দর্শকদের মধ্যেও এই সুরের পুনরাবৃত্তি এক ধরনের কৌতূহল তৈরি করে।
অনেকেই জানতে চান, কীভাবে এত দীর্ঘ সময় একই সুর বাজানো সম্ভব?
এই কনসার্টটি ছিল সঙ্গীতের জগতে একটি বিরল ঘটনা, যা শিল্পী এবং শ্রোতা উভয়ের জন্যই এক নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে।
এটি ধৈর্য, একাগ্রতা এবং সঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: The Guardian